শুক্রবার, ৯ অক্টোবর, ২০০৯

প্রেম বিষয়ক প্রতিপাদ্য(প্রথম অধ্যায়)

গত দশদিন হতে রফিক প্রেম আর বিষাক্ত চেতনাগত অন্তর্দ্বন্দ্ব নিয়ে একটা চিন্তার আকৃতি খোজার চেষ্টা করছে। চায়ের কাপে হাজার হাজার আন্দোলনের পরেও সেগুলো কেন যেন আকৃতি শুন্য থেকে যাচ্ছে। মুনিম নতুন সেল ফোন কিনে যখন অতিরিক্ত আনন্দে ক্যাম্পাসে আক্ষরিক অর্থেই হাটা শুরু করেছিল সেদিন রফিক এইসব তদর্থক চিন্তাকে বড়ই ফালতু বলে উড়িয়ে দিয়েছিল।

ভোগবাদ শব্দটি রফিকের সমালোচনার মূল অস্র হলেও সেদিন সে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছিল ভোগবাদী চিন্তা খুব ফান্ডামেন্টাল। তাকে এই শতকের প্রগতি, সমাজতান্ত্রিক জ্বালাময়ী কবিতা দ্বারা ধামাচাপা দেয়া যায় না। কারন বেশ দামে কেনা সেল ফোন টি রফিককে কোন কারন ছাড়াই আকরষন করেছিল। যা কট্টর প্রগতিবাদী রফিকের জন্যে বেমানান।

প্রেম নিয়ে এইসব উথলানো চিন্তাভাবনার কোন বস্তুগত ব্যাখ্যা দাড় করাতে না পেরে এইসব চিন্তভাবনা কে মিডিয়া,বা পতিত সাংস্ক্বৃতিক অবক্ষয়ের প্যারাসাইট হিসেবে ঊড়িয়ে দিল। সোজা বাংলায় আজাইড়া।

গলি দিয়ে হাটতে হাটতে রফিক এই চিন্তা ভাবনা গুলোকে দূরে নিক্ষেপের চেষ্টা করল। ময়লা রং এর সাড়ি সাড়ি অবিন্যাস্ত বাড়ি। বিভিন্ন উচ্চতার আর বিভিন্নমাত্রার ক্ষত যুক্ত। পলেস্তরা খসে খসে যায়গায় যায়গায় তৈরী হয়েছে রোমান ঐতিহ্যের দেয়াল স্থাপত্য। রফিক বাজী ধরে বলতে পারবে ১৩১ নম্বর বাড়িটার দেয়ালে তৈরী প্রাক্বতিক যাদৃচ্ছিক চিত্রটি রোমান সম্রাট অগাস্টাসের মত হয়েছে। গলির দুপাশে ঢাকনা হীন ড্রেন। থকথকে ময়লার অলস সান্দ্র প্রবাহ। ভনভন করে জানা অজানা পোকাগুলো উড়ছে। একপাশে একপাল অর্ধনগ্ন শিশু ছালচামড়া হীন একটা ফুটবলে লাথি মেরেই যাচ্ছে। পাশে একটা মধ্যবয়সী ফেড়িওয়ালা ক্লান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে শুন্য চোখে। রফিক তার পাশ দিয়ে যাবার সময় "কুলফি" বলে একটা আনুনাসিক কষ্টচর্চিত শব্দ বের হল তার মুখ দিয়ে। ভীশন অস্বাস্থ্যকর দুই টাকার কুলফি খাবার জন্য রফিকের প্রাণ পুড়ে যাচ্ছিল না। তারপরেও কি মনে করে কুলফি নিল সে।

বাসায় ঢোকার আগে পকেট থেকে বিবর্ণ সেলফোন টা বের করল। বেলা বেশ পড়ে গেছে। সূর্যটা সারাদিন আলো বিইয়ে এখন বুড়োথুত্থুড়ে জটাধারী জ্ঞান তাপসের মত পশ্চিমকাশে রক্ত রঙ ছড়াচ্ছে।

বাসার ভেতরে কলিং বেল টেপার সাথে সাথেই সে শুনল ভেতর থেকে গর্জন শোনা যাচ্ছে। তার মানে উপসাগরীয় যুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। রণতড়ী থেকে একের পর এক নেমে আসছে এফ সিক্সটিন। বিস্ফোরনে উড়ে যাচ্ছে শান্তি। রফিক দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার শৈশব কৈশর গেছে পারিবারিক চিরন্তন মহাযুদ্ধের মাঝে শ্র্যাপ্নেলে বিদ্ধ হতে হতে। অর্থনৈতিক ঘাটতি নাকি জীবনের একান্ত নিরর্থকতাকে বুড়ো আংগুল দেখানোর উদ্দেশ্যে এই প্রাথ্যহিক থিয়েটারে তার বাবা মা অংশ নেয় রফিক বুজে উঠতে পারে না।

বাসায় রফিকের চলাফেরা অনেকটাই অনুপ্রবেশ কারীর মত। নিজের উপস্তথিতি এই পারিবারিক হিংসা আর গোলাবারুদের অপার সৌরভের গ্যাস চেম্বারে অনেকটাই রফিককে মানসিক নিরাপত্তাহীনতায় ভোগায়। তাই সর্পচলনে অভ্যস্ত হয়াটাকেই রফিক সর্বোত্তম ডিফেন্স মেকানিজম মনে করে। রিশাদ প্রায়ই বলে বুদ্ধিস্ট ফিলোসফির কন্টেম্পোরারি ভার্সন নির্বান লাভের উপযুক্ত উপায়,"keeping low profile"

রফিকের রুমের সিলিং ফ্যানটা ঘুরছেই, হাল্কা ঘট ঘট শব্দ। বাতাস উতপাদনের হার অত্যন্ত সীমিত। সুতরাং সিলিং ফ্যান্টার অস্তিত্ব কেমন যেন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মত অর্থহীন। রফিকের চিন্তা আবার গ্রেনেডে মরা ভিয়েতনামিজ বিপ্লবীর বিচ্ছিন্ন লাশের মত ইতস্তত ঘুরে বেড়াতে লাগল। প্রেম কি জানা হঠাত এত জরুরী হয়ে গেল কেন? প্রাকৃতিক নির্বাচন আর মিউটেশন জনিত তত্বের মাঝে এইসব অসংজ্ঞায়িত মানসিক অভিক্রীয়া রফিককে খুব জ্বালাতন করতে লাগল। যাকে ডিফাইন করা যায় না তাকে কিভাবে বোঝা সম্ভব? বুড়ো দাদু ডারউইন কি যথেষ্ঠ ছিল না? প্লেটোনিক তত্বের পুর্জাগরন কেন দরকার। রফিকের মাথার চারপাশে এলিয়টের কবিতার ফাকে ফাকে ফ্রয়েড আর হ্যাভল্ক এলিস রা ঘোরাঘুরি করতে লাগল। ভীষন বিতৃষ্ণা নিয়ে কখন যেন রফিকের স্নায়ু অবশ হয়ে আসল, এবং উপরের ফ্যান্টা পারিবারিক মহাযুদ্ধের আবহ সংগীত তৈরী করতে লাগল।

*************************************************************************************

"তোর মেটামরফসিস হচ্ছে"
চিন্তাযুক্ত একটা ঢং এর পশ্চাদপটে বিস্ফোরক হাসির উতস লুকিয়ে রেখে বলল রিশাদ। মুখের পেশীগুলো ব্যাপক বিনোদনের সাথে টানছে তার কনফুসিয়স মার্কা চেহারাটাকে পাল্টে টুথপেস্টের বিজ্ঞাপনের মডেল বানিয়ে দিতে।
রফিক বিরক্ত হয়ে জানতে চাইল
"কেন বলতেছিস?"
"তুই সাধারনত দীর্ঘসময় দার্শনিক থাকিস না, দার্শনিকতা হুট করে তোর মাঝে আসে আর চলে যায়। এবার মনে হয় ভীষনতর কিছুতে পেয়েছে তোকে। তোর চেহারাও সিগমুন্ড ফ্রয়েডের মত হয়ে যাচ্ছে।"
রফিক সিগমুন্ড ফ্রয়েড শব্দটাতে রিশাদের অনাবশ্যক জোড় দেয়াতে ক্ষীপ্রতার সাথে তার চোখ গুলো হেটে যাওয়া একজন আবেদনময়ীর গজেন্দ্রগমন থেকে সরিয়ে কর্কশ কন্ঠে বলে উঠল
"বালের কথা বলবি না। এমনেতেই ভাল্লাগতেছে না, তার উপর আইছস কাটাছেড়া করতে। আর প্রমথ চৌধুরীর ভাষা ফলাইতেছস ক্যান, মাটির মানুষ ,ময়লার মত কথা বলবি"
বলতে বলতে আড় চোখে গজগামিনীকে আরেকবার দেখে নিল রফিক। সর্বজনীন পেন্ডুলামের মত দুলছে সুডৌল নিতম্ব, শতাব্দীজুড়ে জমা জ্ঞান, বিজ্ঞান সব কি নিদারুন অর্থহীন এই দৃশ্যের কাছে। মানব সমাজের মুখোশ আর আধ্যাত্নিক গালগল্পের বাগাড়ম্বরের এনসাইক্লোপিডিয়ার কথা ভেবে হেসে ফেলল রফিক।
পাশে তাকিয়ে দেখল রিশাদ কখন যেন উঠে গেছে। ক্যাফের পাশে সবুজ ঘাসে মিলির সাথে বসে আছে।
"ধুর"
মুখটা তেতো বানিয়ে ভাবতে লাগল এই পৃথিবীর অগ্রগতি কিভাবে মেয়েমানুষের আচলের ভাজে যুগের যুগ আটকে গেছে। মানুষ কিভাবে আটকে গেছে এই অসংজ্ঞায়িত অনুভুতির অচেনা চোরাবালিতে। এককালে রিশাদ গলার রগ ফুলিয়ে রিসেশনের বিশ্লেষন করত, বাজারের ক্ষুধা আর কর্পোরেট ফটকাবাজির যাত্রাপালায় নি:স্ব মানুষের কথা বলতে বলতে ওর চোখে জমা হত আজন্ম ক্রোধ। পুজিবাজারের দানব এর উতপত্তি এবং বিকাশের কথা বলতে বলতে বৃষ্টির মত থুতু ছেটাত, রফিক কখোনো বিরক্ত হয় নি এই মেঘহীন মানব উপলব্ধির বৃষ্টিতে। এখন নিশ্চয়ই রিশাদ সাবধানে কথা বলে, গলার রগটা কখোনোই দৃশ্যমান হয় না, তার উতসাহী উপলব্ধী মেকি সামাজিক সৌজন্যকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে তীব্র বেগে ওভারটেকে করে না।
আর এই অকাল মনুষ্যচেতনাগ্নির মৃত্যু ছোটখাট নীল জামা পরা প্রসাধন হীন শ্যামলা এই মেয়েটার জন্যে?মসৃন মেঘের পাশে উকি দেয়া গ্রহন আক্রান্ত সুর্যের মত চোখের অধিকারীনির জন্যে? পাতার মত কোমল শিরা বয়ে যাওয়া সমতলের হাতের জন্যে? লাজুক লুকিয়ে থাকা জলপ্রপাতের অসাবধানে বেড়িয়ে আসা একরাশ ঢেউ এর মত চুলের জন্যে? অসংখ্য প্রাকৃতিক শৈবালের মত সবুজাভ আবেশের একটি ঠোটের জন্যে?সবুজ ঘাসের উপর বসে থাকা এই কোমল দেবীর জন্যে?

রফিক বিদ্যুতস্পৃষ্টের মত ঝাকি দিয়ে উঠল। কি ভাবছে সে এসব? এসব কোথা থেকে আসল? এগুলো তো চেনে না, নিজেকে শারারীক তৃপ্তি দেবোর সময় যেমন অনুভুত হয় এই অনুভুতি গুলো খুব আলাদা। সেগুলো খুব ঝকঝকে খোলা তলোয়ারের মত তীক্ষ্ন হতে পারে কিন্তু এই গুলো অতলান্তের মত গভীর।

স্বর্গীয় বা নারকীয় যাই হোক না কেন, ফ্রয়েড হ্যাভলক এলিস যেন কোচকানো ব্যাঙ্গাত্নক আকৃতি নিয়ে রফিকের চারপাশের একসময়কার প্রেডিক্টেবল বাতাসকে হাইজেনবার্গীয় অনিশ্চয়তা দিয়ে ঢেকে ফেলল।

রফিক সবুজ প্রেক্ষাপটে সবুজ মিলির কাব্যিক দৃশ্যটাকে একটা খটমটে দার্শনিক চিন্তা দিয়ে ঢেকে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করতে করতে হাটতে লাগল।

*************************************************************************************
ঝরঝর করে বৃষ্টি পরছে। আকাশটা এত ঘোলাটে রহস্যময় হয়ে আছে যে ঘন্টাখানেক আগেও তার আগ্নেয় নীলাভতার কথা সম্পূর্ন অস্বীকার করা যায়। ঝমঝম শব্দে ট্রাম্পেট বাজিয়ে স্নান করাচ্ছে এই ময়লা, আস্তাকূড় আকৃতির বিশাল পৃথিবীটাকে। রফিক বৃষ্টির মাঝে কম আলোয় ঘোলাটে সবুজ দেখতে দেখতে ভাবল, বৃষ্টি পরের ভেজা সবুজের কথা, তার জ্বলজ্বলে যৌবনের কথা, বৃষ্টির সময় যে সবুজ গুটিয়ে লুকিয়ে থাকে তার কথা। আর বৃষ্টির পরের রৌদ্রে খাপখোলা তলোয়ারের মত , উন্নত স্তনের সপ্তদশীর মত, আগুন ছড়ানো কামনার মত জেগে উঠা সবুজ!! কিভাবে জৈবিক সব চাহিদা আর কামনার চারপাশে ঘুরপাক খায় মানবিক পলকা মুখোশ, আর কিভাবে বৃষ্টির ঘোলাটে সবুজ রোদের মাঝে গিয়ে যৌবনবতী হয়ে পরে, মাথা নেড়ে রফিক ভাবল সবই বিভ্রম। ঘোলাটে সবুজ থেকে আগ্নেয় নারী শরীর।

এই কংক্রীটের সমুদ্রে যান্ত্রিকআবেগুচ্ছ আর আর্টিফিশিয়াল সব সুগন্ধ দুর্গন্ধের মাঝে ভেজা মাটির গন্ধটা রফিকের দ্রোহে ক্রোধে পাথরসম অনুভুতিগুলোকেও দুর্বাঘাসের স্পর্শের মত কোমল করে দিল। কেন যেন সত্যেন দত্তের বস্তাপচা ছড়াজাতীয় কবিতার অপচেষ্টা তার মাঝে ঝিলিক দিয়ে গেল হঠাৎই। ঝর্ণা!!

তবে তিরিশের আধুনিকেরা আবার দলবল নিয়ে তাকে গত শতকীয় রোমান্টিক মেয়েলী শীৎকার থেকে উদ্ধার করল দ্রুতই যখন জনৈক উদাস বালিকা এককোনে আকাশের দিকে তাকিয়ে তার পরনের ছেড়াখোড়া কাপড় আর দারিদ্রের চাবুকের দাগ উপেক্ষার বিফল চেষ্টা করে যেতে লাগল। মনে মনে রফিক বলল "আমি ব্যাপ্টাইজড হলাম এই নরকে!"

একে তো বৃষ্টি তার উপর সমাজতান্ত্রিকদের ধর্মঘট, তাই লোকজন নেই বললেই চলে। ধর্মঘট সুপারভিশনের জন্যে কোন পাতি কমিউনিস্টকে আশে পাশে দেখা গেল না। "দীর্ঘজীবি হোক লেনিন" গলা ফুলিয়ে আবৃত্তি করা মুনিমকে রফিক দেখে এসেছে হলে গোগ্রাসে পুজিবাদী হলিউডী সিনেমা গিলতে।

চপচপে ভিজে একটা নারীমুর্তি যখন ঢুকল ক্যাফেটেরিয়াতে তখন রফিক খুব আগ্রহ সহকারে চায়ের কাপ থেকে একটা পিপড়ে তোলার চেষ্টা করছিল।

"কি করছিস?"
"তিন টাকার চায়ের অর্ধেক যাতে এই পরিশ্রমী পিপড়ের পেটে না যেয়ে অলস রফিকের পেটে যায় সেটা নিশ্চিত করছি"
রফিক মোটামুটি না তাকিয়েই উত্তর দিল।
"তুই সারাদিন এইসব কি আজাইরা জিনিস ভাবিস রে? মুনিম বলল তোর নাকি মেটামরফসিস হয়ে তেলাপোকা হয়ে যাবার সম্ভাবনা আছে "
"কিছুই ভাবি না, চা খাই"
"খাইতে থাক। রিশাদ রে দেখছিস?"
"দুই ফোটা বৃষ্টি পড়লেই রিশাদের খোজ করতে হবে? আরে ধুর তোদের লাইগা তো পৃথিবীর স্বাভাবিক কাজকর্ম থাইমা যাইতে হইব। সবকিছুতেই রোমান্সের অনুষঙ্গ পাস। ফাউল।"
"এইগুলা বলিস না, কথায় কথায় কান্ট ,হেগেল মারলে মানুষ সুপিরিয়র হইয়া যায় না, তবে ছাগলা দাড়ি বড় হইতে পারে"
"হ্যা পৃথিবীতে তো লজিক্যাল সুস্থ মস্তিস্কের কিছু থাকতে পারবে না তগো লাভবার্ড দের দাবড়ানিতে।সবকিছুতেই ফিচ ফিচ কইরা গ্লিসারিন কান্নার সুযোগ খুজবি"
"চ্যাতোস ক্যান এত, প্রেমে পড়ছস নাকি? কেমন যেন ডিফেন্স মেকানিজম টাইপ আচরন মনে হইতেছে"

রফিক চমকে গিয়ে চায়ের কাপ উল্টে নিজের আধময়লা ফতুয়ার মাঝে একটা উত্তরাধুনিক ইম্প্রেশনিজম মার্কা ছবি উৎপাদন করল।
মিলি হাসতে হাসতে উল্টে পাল্টে যেতে লাগল। ওড়না দিয়ে চোখের পানি মুছতে গিয়ে মুখের উপর লেপ্টে থাকা চোখের কাজলকে আরো বিস্তৃত করে দিল। তাতে মিলির বিশেষ মাথা ব্যাথা আছে বলে মনে হল না। ভীষন বিব্রত অবস্থায় রফিক একবার মিলির আড়চোখে কাজল লেপ্টানো মুখের দিকে তাকালো। যদিও সম্পূর্নভাবে নিশ্চিত ভাবে ব্যাপারটা বলতে পারবে না, এবং সেটাকে অযৌক্তিক বলে উড়িয়ে দেয়ার জন্যে সে প্রস্তুত তার পরেও মন্থরীকৃত সময়ের মাঝখানে ত্বরণিত হৃদপিন্ডের অদ্ভুত মিশেল তাকে বাকরুদ্ধ করে দিল।

*************************************************************************************

নিউমার্কেট থেকে কেনা শক্ত মলাটের বইটা খাকী মোড়ক থেকে বেড় করে বারকয়েক নেড়েচেড়ে দেখল রফিক। অনেকগুলো টাকা বেড়িয়ে গেল এই প্রেসের গন্ধলাগা কাগজস্তুপের পেছনে। সেব্যপারে বিন্দুমাত্র মাথা না ঘামিয়ে নতুন বইএর স্বর্গীয় সুবাসটা আশ্লেষে উপভোগ করতে লাগল। রফিক। পকেটে কয়েকটা টাকা এখনও অবশিষ্ট আছে। একটা ক্যাপ্টেন ব্ল্যাক কিনে কিছুক্ষন খক খক কাশবে নাকি এই সিদ্ধান্তটা লোভীর মত রফিকের চারপাশে ঘুরতে লাগল। দীর্ঘদিন সিগারেট খাবার পরেও ক্যাপ্টেন ব্ল্যাকের ধাক্কা এখনও ঠিকমত সইতে পারে না সে।

কেন যেন, হয়ত চিন্তাগত ঝড়ের জন্যেই , রফিক আনমনে বাহারী সিগারেটের দোকানটা পাশ কাটিয়ে উচু গেট দিয়ে বেড়িয়ে আসল। অসংখ্য রিক্সা ,টুং টুংশব্দ, কাচা ছোলার ফেরিওয়ালার ভীড়েও রফিক উপরের আগ্নেয় নীল মহাকাশের দিকে তাকাল। সুধীন দত্তের উটপাখির কথা মনে পড়ে গেল তার। "নির্মম নীল মহাকাশ"। সেও কি বালুতে মুখ গুজে থাকে? মেরুদন্ডের অনন্ত অভাব আছে তার?

রিকশা ডেকে উঠে পড়ল সে। ভাড়া বেশী চেয়েছিল। আজকে কিছুটা স্বাস্থ্যবান পকেটের সম্মান হিসেবে উৎকট দরদাম টা ক্ষুধায় আক্রান্ত পকেটের দিনের জন্যে রেখে দিল সে।

অনেক গুলি ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তার। কিন্তু যে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবার কোন ইচ্ছাই নেই সেই ব্যাপারটি মাথার ফোকরে দিগ্বিদিক লম্ফঝম্প দেয়া শুরু করাতে বিরক্ত হল সে। আরে প্রবলেম কি? মিলি দেখতে খারাপ না। সেইসাথে যৌবনের সব খাজভাগও দৃশ্যমান। কিন্তু একই জেনারেল ক্যারেক্টারইস্টিকস সত্য আরো হাজার হাজার ললনার। বরং স্তনের ইচ্ছাপূর্বক বিস্ফোরন আর নিতম্বের ঢেউ একশতবার দেখা যায় অসংখ্য ভিন্ন পরিস্থিতিতে, পরিবেশে। সেখানে কি কারনে মিলির মিডিওকার দেহসৈষ্ঠব ফ্রয়েডীয় মনস্ত্বত্বে আক্রমন করবে সবার আগে? আরে এই সকল আক্রমন তো অপরিচিত না। সেই ছোট বেলা থেকেই, যখন থেকে পৌরুষ উথিত হওয়া শিখেছে তখন থেকেই নিয়মিত আনাগোনা করে এইসকল নার্ভের ইলেক্ট্রিক পালস। তাদের চক্করে পরে নিয়মিত অন্তর্জাল কে ভালোই কষ্ট দিয়েছে রফিক। সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে তৃপ্তির। মিলি দৃশ্যপটে আসবে কেন? কেন ঐ যে মেয়েটা কানের পাশের চুল ঠিক করছে, আর ওড়না খসে পরে যাচ্ছে, যাকে নিয়ে রফিক আরেকবার ঘুরে আসতে পারে ইমাজিনারী হেরেম থেকে , কেন মিলি এর থেকে আলাদা কোন অনুভুতি উৎপাদন করবে? ধুর শালার মন!

রফিক কষে গোল্ডলীফের নিকোটিন মেশানো বায়ু ফুসফুসে আরো কিছু কৃষ্ণাভ ক্ষত তৈরীর জন্যে পাঠিয়ে দিল। ভাঙ্গাচোরা রাস্তায় ধাক্কা খেতে খেতে এগোতে থাকা রিক্সায় বসে রফিক নতুন কেনা বইটা খুলে বসে পড়ার ভান করতে লাগল। তার প্রিয় বিজ্ঞানী রিচার্ড ফাইনম্যানের একটা ছবি বইটার প্রথমে দেয়া আছে। সেটার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকল। তারপর বিক্ষিপ্ত কিছু চিন্তাভাবনার মাঝখানে স্বল্প পরিসরে বইএর একটি বাক্য পড়ার চেষ্টা করতে লাগল।

তখনই উল্টা দিক থেকে হুড ওঠানো একটা রিকশা আসতে লাগল। হাজার রকম মুক্তচিন্তাভাবনা করার পরও গুহাবাসী আদিম স্বত্তার প্রেরণায় রফিক উকি দিল হুডের ভেতরের দৃশ্যের দিকে। মিলির ছোটখাট অবয়ব টা চিনতে মোটেও ভুল হল না তার, আর তার ঠোটে চিরদিনের তৃষ্ণার্তের মত চষে বেড়ানো রিশাদকেও চিনতে ভুল হল না তার।

পলাশীর মোড়ে রিকশা এসে থামল তখন পলাশীতে অনেক ভিড়। ফটোকপি মেশিনের ভোতা শব্দের পাশাপাশি পেয়াজু ভাজার চড়চড়ে শব্দ অদ্ভুত এক সিম্ফোনী তৈরী করেছে। সাদা রং এর একটা গাড়ি থেকে ঠক ঠক শব্দের দ্যোতনা দিয়ে হাইপেন্সিল হিল পড়া , একপাশে গামছার মত করে ঝুলানো কর্মহীন ওড়না, আটসাঁট জামার মধ্য ফুটে ওঠা স্তনের নকশা, প্রায় সোনালী রং এর অবিন্যস্ত চুল, বিশাল একটা নাকফুল পরা একটি ললনা বেড়িয়ে আসল। রফিক স্বীকার করল এরকম ধারালো সামুরাই তলোয়ারের মত সৌন্দর্য সে দেখেনি। রফিকের ইচ্ছা করল মেয়েটার সামনে গিয়ে দাড়াতে, এত কাছে যে মেয়েটির প্যারিস পার্ফিউম কে এড়িয়ে যাতে রফিক নি:শ্বাস না নিতে পারে, অথবা রফিকের দাড়িওয়ালা জনপ্লেয়ারকে এড়িয়ে যেতে মেয়েটি না পারে।

কাছাকাছি দাড়ানোর পর যখন দুরত্ব এতটাই কম হবে যে পলাশীর বারোয়ারি সিম্ফোনী গা ঢাকা দেবে তখন রফিক..................


ঠাস করে মেয়েটার গালে একটা চড় মেরে বলবে
"আই প্রেফার মাই হ্যান্ড, বিচ"

১৯৭১ এবং আমি

১৯৭১ এর দর্শক ছিলাম না আমি ।ঐ আলো আর আধার মেশানো সময় টা তে আমার বাবা ছিলেন ১০ বছরের একজন ছোট,অন্ধকার অনুধাবনে অক্ষম, মানুষ ।আর আমার ময়ের জন্ম হয়েছে ৭১ এর সেপ্টেম্বরে(এজন্যেই হয়ত আমার মা এত উজ্বল,৭১ এর সব আগুন মেশানো শক্তি তার জন্মে মিশে আছে) ।
আমার বড় চাচা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন(ভুল বললাম,মুক্তিযোদ্ধারা কোনো অতীত ইতিহাস নন,তারা আমাদের অতীত,বর্তমান,ভবিষ্যত )।চান্দিনা অপারেশনে একটা সুচালো রাইফেল এর বুলেট,তার ডান বুকের পাশ ঘেষে গিয়েছিল ।আমি কখোনো এত সুন্দর ক্ষত দেখিনি ।সেই আলোঘেরা সময়টা নিয়ে চাচা যখন কথা বলেন, তার চোখ যেন নীলাভ স্বপ্নীল হয়ে উঠে ।মুরাদনগরে আর্মি ক্যাম্পে আক্রমনের সময় একরাত তাকে পাশের একটা ডোবায় কচুরীপানা মাথায় দিয়ে থাকতে হয়েছিলো ।সেই ডোবায় নাকি ছিলো বিশাল বিশাল জোঁক ।চাচা বলে জোঁক তো আর স্বাধীনতা বোঝে না,তাই মুক্তিযোদ্ধাদের রক্ত শুষে খেতে তাদের বিশেষ কোনো আপত্তি ছিলো না ।
৭১ সম্পর্কিত আমার আবেগ অনেকটাই ধার করা ।তবে সেই আবেগই আমি অনেক বেশি কেপে উঠি,কেপে কেপে উঠি ।ভালোবাসা জমতে থাকে স্তরে স্তরে ।
সৈয়দ শামছুল হকের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায় পড়ে আমি ভীষন আপ্লুত হয়েছিলাম ।
নুরল দীনের সারা জীবন পড়ে মনে হয়েছিলো,৭১ সালে যে হাজার হাজার,লক্ষ লক্ষ নুরলদীনের জন্ম হয়েছিলো,তারা
আমার দেশটাকে সোনায় সোনায় আবৃত করে দিয়েছিলো ।
কিন্তু নষ্টদের আগ্রাসন দিনে দিনে বাড়ছেই ।

মাঝে মাঝে মনে হয়,সারা দেশ ভরে গেছে ঐসব রক্তচোষা জোঁকে!যারা দংশন করেছিলো ৭১,এখনও তারা দংশন করেই যাচ্ছে ।

আমি কখোনো ৭১ নিয়ে বিশেষ কিছু লিখি নাই ।কারন নিজেকে কখোনো ৭১ কে ধারন করার যোগ্য মনে হয় নাই ।
তবে মুক্তিযুদ্ধের দলিলপত্রের কিছু অংশ পড়ে তীব্র আবেগ নিয়ে একবার একটা কবিতা লিখেছিলাম,৭১ নিয়ে আমি ,সেটা ছাড়া অসম্পূর্ন(কবিতাটা কলেজে থাকার সময় লেখা,প্রায় ৪ বছর আগে,ঐসময়ে লেখা সবলেখাই এখন আমার ভালো লাগে না,ফেলে দিয়েছি অধিকাংশ ,অপরিনত মনে হত ।তবে এইটা এখনও ভালো লাগে আমার ।)


১৯৭১
বাতাসে আগুন জ্বলছে,
অনাগরিক স্রোতে আকাশে,অবশ কম্পন ।
আগুন,ঘৃণা,অথবা নীল আকাশের বিরতিহীন সহবাস ।
সবুজ ঘাস,নদী,
নির্লজ্ব লালায়িত লাল লাভাস্রোতে ঢেকে যায় ।
চারদিকে আধপোড়া বিবেক,মৃতদেহ এবং সদ্যজাতের চিত্কার,
হিংসার নামে কদাকার মৃত্যু ।
অথবা কল্পনিক ন্যাচারাল ইকুলিব্রিয়াম ।
অন্ধকারটা যেন অন্ত:স্বত্তা !
আলোর অপেক্ষায় ছিলো সবাই,
আলোর অপেক্ষায় ছিলো অনেকেই ।
সেই ছেলেটি;
চোখে আকাশ হৃদপিন্ডে স্রোত নিয়ে,
অনন্তের মত আকস্মিকতা নিয়ে,
সোনালী সবুজ ঢেউ ওঠা ঘাসের মত,নদীর মত,কাব্যকে
ধারন করেছিলো বিশুষ্ক হৃদপিন্ডে ।
যার লাশ আজকাল,
শেয়াল শকুন অথবা কুত্তার নেশাতে ব্যস্ত ।
অন্ধস্রোতে লাশের অন্ধকার গন্ধ!
অথবা অতলান্তের মত সেই মেয়েটি!
যার শরীরে সোনালী ধানের শীষের মত গন্ধ ছিল,
যার সোনার রং এ,
শাদা শাপলার অকৃত্রিম স্পর্শ ছিলো ।
এখন সে,
ছিন্ন স্তন,ছেড়া তলপেট,বেয়নেট চর্জের ঘৃনা
আর কৃষ্ণশূন্যতার মত চোখ নিয়ে ভাগাড়ে বাসী ।
লাভাস্রোতে আকাশে ওড়ে,
সবুজ আগুনে পোকামাকড়ের আনন্দময় মৃত্যু ।
আমরা সোনায় জন্মাই ।
আকাশে আবার পুরাতন সূর্য,
কী যে লাল!!
এখনো,অসত্য,ঘৃণা,ভুলের মাঝেও,
জোছনায় ওড়ে মাতৃফুল ।

আমি এবং অর্থহীনেরা

মাঝে মাঝে খুব ভীড়ে মিশে যেতে ইচ্ছে হয় ।মনে হয় একবার যদি,মিশে যেতে পারি ভীড়ে,তাহলে কোনোও কিছুই একা সহ্য করতে হবে না ।
এখানে প্রসঙ্গ চলে আসে কি সহ্য করতে হবে?
একধরনের,পরস্পরবিরোধীতা আমাকে সবসময় তাড়া করে ফিরে।আমি কখোনোই জীবন সর্ম্পকে আশাবাদী ছিলাম না ।অর্থহীনতায় আমার সবকিছু ভরে যেত ।চারপাশটা কেমন যেন অন্ধ হয়ে আসে ।
গতবছর কোনোও একসময়ে আমি রোমান হলিডে দেখেছিলাম।স্বাভাবিকভাবেই আমি আদ্রে হেপবার্নের প্রেমে পড়ে গেলাম(হেপবার্নের ছোট্ট টিকোলো নাক টা আর ডানপাশের একপাশের একটু অসমান দাঁত ভালো না বেসে কোনোও পুরুষ মনে হয় না থাকতে পারে) ।তারপার থেকে একটা ভয় কাজ করত ।মনে হত গ্রেগরী পেক হয়ে যাচ্ছি ।দিনের শেষে সব স্বপ্নের কাছ থেকে ওর মত এক হাত পকেটে দিয়ে হেটে চলে আসতে হবে ।
নষ্ট সময়ে স্বপ্ন দেখা খুব সাহসের ব্যাপার ।এলোমেলো চিন্তায় সমস্ত কিছু ভরে যেত ।
বুয়েট ক্যাফেটেরিয়ার সামনে যে বিশাল গাছটা আছে তার নীচে বসে এইসব সর্বগ্রাসী ভয়ে কাপতাম আর সিগারেট খেতাম ।
আমার কাছে সাধারনত্ব খুব আকাঙ্খার,কিন্তু সবসময় দুরবর্তী ।
আমি জানি না,আমাকে অনেকেই বলে আমি ত্যারান্তিনোর মুভির চরিত্রগুলোর মত অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি ।reservoir dogs এর মি ব্লন্ড ! অথবা কুবরিকের শাইনিং এর জ্যাক নিকলসন ।
আমার বন্ধু ম্যাক্স বলতো "তার ছিড়ে যাচ্ছে তোর" ।
চৌদ্দ তলার ছাদে আমরা কয়েকজন প্রায়ই চিত হয়ে শুয়ে আকাশ দেখতাম, আবদুল্লাহ গীটার বাজাত, আর চিত্কার করে গান গাইতাম ।
nothing else matters,fade to black,riders on the storm,অনিকেত প্রান্তর,বিজয়ের গান,আল্লাহকে বান্ধে রাখদে,রুপক,নতুন দিনের মিছিলে,be yourself,wake me up when september ends,..............
আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মনে হত,তারা গুলো নীচে নেমে আসছে ।আমি বলতাম যার যত তার ছেড়া,সে তত অর্জন করল ।
ম্যাক্স একজন মেয়ে কে ভালোবাসে, তা নিয়ে কত গবেষণা!মাঝে আমাদের একজন ৩৭ টা ঘুমের ওষুধ খেলো,ও যখন হাসপাতালে,আমরা কষ্টে ছিড়ে ফেড়ে যাচ্ছিলাম ।
প্রচন্ড গতি ছিলো জীবনে এবং আছে । তারপরও কেনো এত শূন্যতা ভর করে ।
তীব্র নারী বিদ্বেষী ছিলাম ।আমি আমার ইলেকট্রিকাল ডিপার্টমেন্টের(আমাদের ব্যাচ এ ১৩০ জনে ১১ জন মেয়ে) মাত্র দুই জনের সাথে কথা বলেছি গত দুই বছরে ।একজনের সাথে একবার,আর একজনের সাথে দুইবার(!) ।
তারপরও সব অনুভূতির কূল ছাপিয়ে,কিভাবে কিভাবে কি হয়ে গেলো ।
ভালোবাসায় বিশ্বাসী ছিলাম না ।ভালোবাসাটাকে বরই অতিরন্জিত মনে হত ।প্রাণী হিসেবে টিকে থাকাটাই সব,আর টিকে থাকতে মনে হয় না ভালোবাসার কোনো প্রয়োজন আছে ।বিজাতীয় সবরকম জীবন দর্শনে ডুবে ছিলাম।এবং আছি ।
মাঝে মাঝে খুব ভীড়ে মিশে যেতে ইচ্ছা হয় ।
সকল সময়ে দন্ডিত থাকতে ভীষণ ঘৃণ্য লাগে ।মানিক বন্দোপাধ্যায় এর "প্রাগৈতিহাসিক" এর ভীখু কে দেখে একটু শান্তি পাই ।আবার "চতুষ্কোন" এর রাজকুমার কে দেখে ভয় পাই ।
জেমস জয়েস কে ভীষণ পছন্দ করি ।স্বাগত বলে সেটাই নাকি ধ্বসে যাবার প্রথম পূর্বাভাস ।এডওয়ার্ড নর্টনের ফাইট ক্লাব দেখে মনে হলো ও ই তো আমার প্রতিবিম্ব ।কেনো একজীবনে এতবার মরতে হয় জনি না,জানতেও চাই না,
নাগরিক অস্বাভাবিকতার উদাহরন হয়ে থাকি ।আমি ।

আমার নারী লিপ্সার ঐতিহাসিকতা এবং বিবর্তন

আমি ঠিক জানি না জানি নাকি নিয়ে লিখব, এম্নিতেই চিন্তাগুলো কে ঢেলে দেবার চেষ্টা করছি এলোমেলো র্যা ন্ডম বিন্যাসে, পারিসাংখ্যিক কেন্দ্রীয় প্রবনতার কারনে হয়ত সেগুলো একটা আকৃতি পাবে তবে নিশ্চিত ভাবে সেই আকৃতি অবয়ব কোনো পূর্বপরিকল্পনার অংশ নয়।
একসময় যখন জীবনটা ব্যাপকভাবে বিক্ষিপ্ত এবং মোটামুটই ভাবে উদ্দেশ্যহীন ছিল(তবে আল্টিমেট পাগলা ছাড়া ছাতার জীবনে হলুদ পাঞ্জাবীর “হিমু” মার্কা নির্লিপ্ততা পাওয়া মোটামুটি ভাবে অসম্ভব ব্যাপার। জীবনকে ঊদ্দেশ্যহীন বলা একরকম আধুনিকতা আক্রান্ত হতাশা বিলাস বলা যেতে পারে)তখন এই একটা ব্যাপার নিয়ে হেভী গবেষনা করতাম। জীবনের কোন মাস্টার ডিজাইন আছে কিনা, নাকি আকস্মিকতাই সবকিছু নিয়ন্ত্রন করে। তবে মজার ব্যাপার হছে জীবনের অধিকাংশ প্রাইম ফ্যাক্টরগুলি যা জীবনে প্রধান স্কেলিটন তৈরী করে তারা কেন যেন খুব বেশী আকস্মিক নয়। এই নাটকীয়তার তীব্র অভাব পপকরন মুভী নির্মাতাদের কাছে খুব একটা আকর্ষনীয় না হতে পারে তবে এটা অসুন্দর চেহারার মত নিয়তিরুপে আটকে থাকবে সবসময়। এখানে অবশ্য জীবনের প্রধান একক স্কেলিটন এর অস্তিত্ব আছে কিনা সেটা আর্গুমেন্টের বিষয় হতে পারে। তবে শেষ কথা হচ্ছে জীবনে কবিতা তো দূরে থাক, কাব্যিকতা বা নাট্যময় গদ্য পর্যন্ত অনুপস্থিত!! সেটা অবশ্য ভাবার প্রধান কারন ছিলো লাইফটা খুব বেশী একরকম ছিল। একটা দিন এত নিদারুন ভাবে আরেকটা দিনের কপি……মনে হত ক্রমাগত কন্ট্রোল ভি টিপে যাচ্ছি……তাইখুব এডিট করার চেষ্টা করতাম !

আমার একটা খুব প্রিয় গান ছিল, গরিলাযের ফিল গুড ইঙ্ক। ওইগানের মতই সারাক্ষন উইন্ড মিলের সন্ধান করতাম, তীব্র বাতাসের প্রবাহে ধুলার আধিক্য এবং বেদনাদায়ক বিভ্রমগুলো পালটে যাবে এই জাতীয় স্বপ্নও দেখতাম। অবশ্য কাজের মাঝে কাজ কিছুই হত না। ভাবতে ইচ্ছা করত এত মুভির কাহিনী বাইর হয় কোনখান থাইকা?

একটা ব্যপার মাঝে মাঝে ভাবি অতীতের ক্ষমতা এত বেশী কেন ? এটা হচ্ছে এমন একটা সময় যেটা নিয়ে আমাদের একেবারেই কিছু করার নেই। অথচ এটায় ডুবে থাকি নাকমুখ ডুবিয়ে? আজব ব্যাপার আমি বিশেষ স্মৃতিকাতর নই। বেশী আগের জীবন কখনি আমার ফিরে পেতে ইচ্ছা করে না।
মাঝে একজন আমাকে বলল স্মৃতিকাতরতা মানুষ এর মানবিকতার একটা অংশ। অর্থাৎ স্মৃতি কাতর না হলে জানোয়ার শ্রেনীর মানুষ হবার ভালো চান্স আছে। আমি অনেক চেষ্টা করলাম কিন্তু বিশেষ কাতর হতে পারলাম না স্মৃতি দ্বারা । ঝামেলাটা হচ্ছে আমার অতীতে হারিয়ে যাওয়া খুব বেশী ব্যাপার নেই। যাদের নিয়ে আমার অতীত তারাও তীব্র ভাবে বর্তমানে বিদ্যমান। তাই হয়ত বুক ফুলাই practicality এর ভাব ধরে।
আরেকটা ব্যাপার হছে অতীত নিয়ে আমার দৃশটিভঙ্গি খুব বেশী গভীরতর প্রজ্ঞাপন তৈরী করে না। খুব বেশী হলে মনে যে অই টাইমটা খুব ভালো ছিল। ব্যাস এই টুকুই। তাছাড়া আমার অতীতের বিষয়গুলোর অনেক গুলোই আডেন্টিক্যালি রিপ্রডিউসিবল। তাই ঝাকি দিয়ে সোজা হয়ে যেতে বিশেষ কাঠখড় পোড়াতে হয় না। আসলে ইমশনাল ব্যাপারগুলো অনেক দাগ ফেলে,(যদিও ব্যাপার গুলো পর্যবেক্ষন থেকে বলা,অতীতে ইমোশনাল ব্যাপার স্যাপারএর তীব্র অনুপস্থিতি দাগ ফেলার ঘটনা একেবারেঈ অবসোলিট করে ফেলে ছে। আসলে কাপড় পরিষ্কার থাকলে সার্ফ এক্সেলের দরকার পরে না।)

মাইয়ামানুষদের প্রচুর আলোচনা হত। কমবয়সী মানুষদের যা প্রধানতম কাজ। ক্যাডেট কলেজে পড়ার ফজিলতে মেয়ে মানুষ বলতে চাইর জন বুঈড়া ম্যাডাম ছাড়া বিশেষ রিসোর্স ছিল না। তবে ক্লাস সেভেনে গিয়ে দুইজন বার্ধক্যহীন ম্যাডাম পাইছিলাম। সেলিনা খাতুন ম্যাডাম আর ফরিদা পারভীন ম্যাডাম। একজন বাংলার আরেকজন ভুগোলের। সেলিনা খাতুন ম্যাডামের কথাবার্তা এত অসাধারন ছিল আর তার মায়া এত অদ্ভুত ছিল এত গুলান বয়ঃসন্ধিকালীন পোলাপান ভুলে গেছিল যে তিনি একজন মেয়ে ছিলেন। এবং আকর্ষনীয়াও ছিলেন। ম্যাডামকে বেশীদিন পাইনি আমরা। সেভেনে থাকা অবস্থায় উনি ঢাবি তে পি এইচ ডি করার জন্যে চাকরী ছেড়ে দেন। তবে ফরিদা পারভীন ম্যাডাম ডাক্সাইসাইটে আবেদনময়ী ছিলেন। যেদিন তার ডিউটি থাকত সেদিন উপরের ক্লাসের ভাইরা দেখতাম মাঞ্জা মারা কাপড় পড়ত। আমরা সবসময় বিভিন্ন স্পেশাল অকেশানের জন্যে সব টাইপ কাপড়ের একসেট আলাদা করে রাখতাম। ভাইরা সেই তুলে রাখা কাপড় পড়ত। ক্যাডেট কলেজের বাটি স্টাইলের আনুবীক্ষনিক চুলে নানা কায়দা করে ভাব আনার চেষ্টা করত। সেই কাজে পানি থেকে শুরু করে মেটাল পালিশ ,কিউই সু শাইনার(তখন হেয়ার জেলের তেমন চল ছিল না)সবই ব্যবহ্রৃত হত। আর ম্যাডামের এই সকল অনুরাগী দের দলে জুনিয়র টীচার রাও ছিল। তারাও নানা ভাবে তার দ্রৃষ্টি আকর্ষনের চেষ্টা করত। অফটপিক হিসাবে এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে ম্যাডামএর পুরো নাম মিসেস ফরিদা পারভীন। আমরা যখন এইটে উঠলাম তখন তিন্শ ক্যাডেটের হ্রৃদয় দ্বিখন্ডিত করে ম্যাডাম কুমিল্লা ক্যাডেট কলেজের পোলাপানের হ্রৃদয়ে দোলা দিতে চলে গেলেন। কানাঘুষা চলতে লাগল পাচওয়াক্ত নামাজ পড়ে কপালে দাগ ফেলে দেয়া প্রিন্সিপাল স্যার তার কলেজে এতগুলো জোয়ান মরদের মাঝখানে এরকম splinter বোমার অস্তিত্ব নিরাপদ মনে করেননি। তাই যুবক ছেলেদের শয়তানের ওয়াসোয়াসা থেকে বাচাতে তার নিজের উদ্যোগেই এই বদলি হয়েছে। সিল্ভার লাইনিং হিসাবে যা উল্লেখ করা যায় আগে ভাইরা বাথরুমে গোসলের টাইমে অনেক সময় নিয়ে গোসল করতেন সেই সাথে নানা রকম ফ্যান্টাসীর জাবর কাটতেন। তাই আমরা নর্মাল গোসল করার টাইম ঠিক্মত পেতাম না, ফ্যান্টাসী তো অনেক দুরের ব্যাপার!!
ম্যাডাম চলে যাবার পরে আমরা মরুভূমী হয়ে গেলাম। তবে আবার শোনা গেল তছলিম স্যারের এক সোমত্থ লাড়কী আছে। তাকে অবশ্য দেখা যেত না,তবে নুরুলহক স্যারের বাংলায় ছয় মেয়েটাকে প্রচুর দেখা যেত। বাংলায় ছয়ের শানে নুযুল হছে পাচ তো তাও ঘুরে এসে মিলে যায়, লেকিন ওই মাইয়ার চেহারা এতই রিমার্কেবল ছিল তাকে বাংলায় পাচের চেয়ে দুপাশে খোলা ছয় বলাই ভালো।

একবার এথলেটিক্সে হেভী নীতিবান তাছলিম স্যারের মেয়ে কে পোলাপান দেখার সুযোগ পেল। এবং বিশেষ আশান্বিত হল। তবে টেনে উঠার পর তাস্লিম স্যার আমাদের অধরা ফ্যান্টাসীকে সাথে করে চলে গেলেন। কিন্তু সেদিকে আমাদের নজর ছিলনা। কারন তখন নতুন এডজুটেন্ট স্যারের আগমন হয়েছে যাকে আমরা মুরগী ডাকতাম। তার বউ এর নাম ছিল জর্ডান। পুরা কলেজ প্লেটোনিক এবং ননপ্লেটনিক উভয়প্রকার ফিলিংস দ্বারা আক্রান্ত হল। কন্সিকয়েন্স হিসাবে আবার বাথরুমে পোলাপান লম্বা টাইম নিতে লাগল! স্যারের একটা পোলা ছিল যাকে আমরা চিকেন ডাকতাম। বাচচাটার হরমোন জনিত কোন ঝামেলা ছিল সম্ভবত,কারন দুই বছরে তাকে এক মাইক্রনও বড় হতে দেখি নাই।

এর মাঝখানে এক্স ক্যাডেট এসোসিয়েশনের পূনর্মিলনী তে প্রথমবারের ব্যাপক হারে ললনা দেখার সুযোগ হল।তারা অধিকাংশই ভাবী এবং ভাতিজী(ক্যাডেট রা দাদার বয়সী হলেও তারা ভাই থাকে)।এদের মাঝে হিট ছিল ডালিম ভাইয়ের(শামসুদ্দীন হায়দার ডালিম, উনি আমাদের এক্সক্যাডেট ছিলেন, আমাদের হাউসের হাউস প্রিফেক্ট ছিলেন) তনিমা হামিদ।ডালিম ভাই আমাদের হাউসের ছিলেন। হাউস লীডারও ছিলেন। তিনি বউকে হাউস দেখাতে নিয়ে গেলেন। কাকতালীয় ভাবে ডালিম ভাই আমি যে রুমে থাকতাম সেই রুমে থাকতেন। তাই সেই ভূতপুর্ব বাসস্থান দেখাতে নিয়ে গেলেন। আমি তখন খালি গায়ে একটা শর্টস পড়ে ঘুমাচ্ছিলাম। কথাবার্তায় ঘুম ভেঙ্গে গিয়ে রুমের মাঝখানে টিভি অভিনেত্রীকে আবিষ্কার করে যারপর নাই লজ্জিত হলাম। সেই সময় ওই ভাতিজীদের সান্নিধ্য পাবার জন্যে আমরা অনেক ছোক ছোক করলাম,বলাই বাহুল্য মিনিমাম পাত্তাও পেলাম না।
যখন ছুটিতে আসতাম, তখন অবস্থার বিশেষ উন্নতি হত না। আমাদের এখানে জনৈক মোটকা ভূড়ীওয়ালা কেমিস্ট্রী পড়াতো। ঐ স্যারের নিজের কোন বিশেষত্ব না থাকলেও অই স্যারের কাছে কিছু গার্লস ক্যাডেট পড়ত। পোলাপান দলে দলে যোগ দিল তথাকথিত রাসায়নিক উন্নতির জন্যে। অবশ্য ইন্টারেকশনে জিরো অভিজ্ঞতার কারনে বিশেষ ভাও করতে পারল না কেউ। মাঝখান থেকে আমাদের স্বাগত একদিন ফিমেল পার্টির লীডার কে হাতে বেশি লোম থাকার কারনে মেয়ে গরিলার সাথে তুলনা করায় অবস্থা আরো খারাপ হল। এটা নিয়ে গোপাল বিড়ি খোর সেই মেয়ে(তার ঠোটের অবস্থার কারনে এই নামকরন। আমাদের অনেক প্রফেশনাল মুড়ি মুড়কির মত সিগারেট চাবানো পোলার ঠোট এত কালো ছিল না।)অনেক চিল্লাপাল্লাকরল।
আমি ছুটিতে এসে কোথাও না পড়লেও এই স্যারের বাসার নীচে দাঁড়িয়ে থাকতাম। পোলাপানের পড়া শেষ হলে নানা কাহিনী শোনা যেত। এর মাঝখানে আমাদের প্রাইমেট আসিফ একজনের আর হাক্কা ফেরদৌস দুইজনের প্রেমে পড়ে গেল। বলা বাহুল্য সেই প্রেম স্বল্প অর্ধায়ুর এলিমেন্টারী পার্টিকেলের মতই!

এই সকল গভীর অভিজ্ঞতার ঝুলি নিয়ে যখন বের হলাম কলেজ থেকে তখন অবস্থা দাড়াল তথৈবচ।
বাইরে আসার পর বাসা থেকে ফোন কিনে দিল। কিন্তু বাইরের পোলাপাইন দেখলাম চরম সেয়ানা। কোচিং করতে গিয়া দেখলাম বাইরের পোলাপান কি অবলীলায় মাইয়াগো লগে কথা কয়। কোচিং এ পরিচিত একজন জিগাইল ফোন ফ্রেন্ড কয়টা। আমি প্রথমে বুঝি নাই ফোন ফ্রেন্ডটা কি জিনিস। পেন ফ্রেন্ড ,চ্যাট ফ্রেন্ড শুনছিলাম আগে। যাই হোক ওই সময়ে ডিজুসের যুগ ছিল। ১২ টার পর ডিজুসএ ফ্রী কল করা যায়। আমি প্রথমদিকের বাংলালিংক সিম নিয়া পিছাইয়া গেলাম। ক্যাসানোভা বন্ধুবর কয়েকটা নাম্বার দিল ,কইল ট্রাই করতে।ফার্স্ট একটারে ফোন করলাম,ওই পাশ থেকে বলল “কে?” আমি কোন কথা না খুজে পেয়ে বললাম “আপনার ভাইকে ডেকে দেয়া যাবে?” ওই পাশ থেকে বলল”আমার ভাই নাই” তারপর ঠাস করে রেখে দিল। তারপর আরো কয়েকটা নাম্বারে ট্রাই করলাম। প্রব্লেম ছিল আমি ফার্স্টেই আটকে যেতাম, তাই ৩০ সেকেন্ডের বেশী দীর্ঘায়ু হত না কনভার্সেশন। তখন এত স্মার্ট পোলাপান চারদিকে পাওয়া যেত যে আমার মত ক্ষেতদের সমাজচ্যুত হবার যোগাড় হল। অনেক ঝোলাঝুলি করে একজনের সাথে কিছুক্ষন কথা কন্টিনিঊ করলাম, মাইয়ার নামটা মনে পরতেছে না,ফারহানা বা ফারিয়া জাতীয় কিছু। নিজেকে বেশ হ্যাডম মনেহল। যাই হোক মাইয়া নিজে থেকেই ফোন দিত মাঝে মাঝে। কিন্তু সপ্তাহ না ঘুরতেই আবিষ্কার করলাম ফটফট করে কথা বলতে পারলেও একেবারেই মাকাল ফল। তার কথা বলার টপিক এত আজাইরা আর কারন অকারনেই ফ্যার ফ্যার করে হাসত যে সেইরকম মেজাজ খারাপ লাগল। তখন এফ এন এফের চল ছিল না, অন্য অপারেটরে ফোন করতে গিয়ে দেড়শ টাকার যে কার্ডটা খতম হয়ে গেল সেটার শোকে প্রায় শয্যাশায়ী হলাম। মাইয়াটা তাও ফোন দিত। ধরতাম না।কাহাঁতক আর বুদ্ধিপ্রতিবন্ধীদের সাথে কথা বলা যায়।

এরপর বুঝে গেলাম মাইয়া মাইনষের লেভেলের অবস্থা। তাই হঠাত করেই একেবারেই মেয়েমানুষ খোজা থেকে অবসর নিলাম। নিজেকে অটোসাজেশন দিলাম বি দ্যা ফ্লেম নট দ্যা মথ!

জেসাস ক্রাইস্টের ঐতিহাসিকতা-২

জোডিয়াকের ক্রস নিয়ে পুনরায় আকোচনা করছি। একটি প্রাচীন সভ্যতার জন্যে কেবলমাত্র শৈল্পিক একটি চিত্র ছিল না, বাত্সরিক সৌর গতি নির্নয়ের একটি ক্যাটালগ ছিল। যোডিয়াকের ক্রশ হতেই পেগান রা নিম্নোক্ত চিহ্ন এডপ্ট করে, ইন্টারেস্টিং হচ্ছে তা ক্রিশ্চিয়ান ক্রুশের অনেক টা কাছাকাছি। পেগানের এই চিহ্ন এখনও বিভিন্ন পেগান মন্দিরে দেখ যায়।

প্রথমিক যুগে জেসাসের যে ছবিগুলো পাওয়া যায় সেগুলোতেও জেসাসের মাথার পেছনে সর্বদা ক্রশ টিকে দেখানো হয়, যার উদ্দেশ্য আর কিছুই না, সূর্যের ক্রসে মৃত্যুর পেগান সিম্বলাইজেশনের একটি ক্রিশ্চিয়ান রুপ।
সে হিসাবে জেসাসের দ্বিতীয় আগমন কেও ব্যাখ্যা করা যায়। আসলেই তিনি আবার আসবেন, প্রতিদিনই আসেন, সকালের সূর্যোদয়ের সময়।
বাইবেলের নতুন ও পুরাতন নিয়মে আরেকটি গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার প্রকাশিত হয়েছে যা একটি আ্যাস্ট্রোলজিক্যাল মেটাফোর, তা হচ্ছে এইজ বা যুগ। এইজ বা যুগ বুঝার আগে আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ন আ্যাস্ট্রোলজিক্যাল ফেনোমেনন বুঝতে হবে যার শাব্দিক নাম "Precession of the Equinoxes" . প্রাচীন মিশরীয় এবং অন্যান্য সভ্যতা গুলো এই ব্যাপারটি পর্যবেক্ষন করেছিল যে প্রতি ২১৫০ বছর পর পর বসন্ত আয়নায়নের সকালের সূর্যোদয় ভিন্ন রাশিতে সংগঠিত হয়(এই কথাটি উত্তর গোলার্ধের জন্যে সত্য। প্রাচীন সভ্যতা গুলোর উত্তর এবং দক্ষিন গোলার্ধের ধারনা থাকার সম্ভাবনা কম। তবে ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে গ্রীস, মিশর, আক্কাদ, পারস্য, প্যালেস্টাইন ইত্যাদি অঞ্চলগুলো উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত)সূর্যের এই আচরনের কারন বর্তমানে বোঝা যায়। পৃথিবী তার নিজ অক্ষে ঘূর্ননের সময় অত্যন্ত মন্থরগতিতে তার ঘূর্নন তল মন্থর গতিতে পরিবর্তিত হতে থাকে। অর্থাত ঘুর্ননের সময় পৃথিবী তার অক্ষ সাপেক্ষে একই তলে ঘোরে না। এই মন্থর ঘূর্ননতল বিচ্যুতির কারনে সূর্য বারোটি রাশি পরিভ্রমনকালে সময় নেয় ২৫৭৬৫ বছর। টলেমীর লেখাতে এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে বর্ননা করা আছে। প্রাচীন সকল আকাশ পর্যবেক্ষকই এই বিষয়টি বুঝতে সক্ষম হয়েছিলেন। প্রাচীন পর্যবেক্ষকরা এই ২৫৭৬৫ বছর কে অভিহিত করতেন "the great year" নামে। এই ২১৫০ বছর কে ঐ সময়কালে বসন্ত আয়নায়নের সূর্যদয় যে রাশিতে হয়েছিল ঐ রাশির নামানুসারে নাম দেয়া হয়। ৪৩০০ খ্রী পূ হতে ২১৫০ খ্রী পূ ছিল the Age of
Taurus বা বৃষ রাশির যুগ। বৃষের আক্ষরিক অর্থ হচ্ছে ষাড়। খ্রী পূ ২১৫০ হতে ১ খ্রী হচ্ছে Age of Aries অথবা মেষ রাশির যুগ। মেষ হচ্ছে ভেড়া। ১ খ্রী হতে ২১৫০ খ্রী হচ্ছে Age of Pisces, বা মীন রাশির যুগ। মীন হচ্ছে মাছ। ২১৫০ খ্রী হতে শুরু হবে নতুন যুগ, The Age of Aquarius, বা কুম্ভ রাশির যুগ। বাইবেলে এই যুগের পরিবর্তন মেটাফোরিক্যালি উল্লেখ আছে। মুসা বা মোজেস সিনাই পর্বত থেকে টেন কমান্ডেন্টস নিয়ে যখন ফির আসলেন, তখ দেখলেন তারঅনুসারীরা একটি সোনার যাড়ের পূজা করছে। এটি দেখে তিনি রাগান্বিত হলেন, এবং ওল্ড টেস্টামেন্ট(তাওরাত)
অনুসারে তার অনুসারীদের আত্নশুদ্ধির জন্যে একে অপরকে হত্যার নির্দেশ দিলেন(এই গল্পটি কুরআনে একটু অন্যভাবে বর্নিত আছে)। এখানে মজার ব্যাপার হচ্ছে মোজেস এসেছিলেন মেষ রাশির শুরুতে। ইহুদী ধর্মেও ভেড়ার একটা আলাদা গুরুত্ব আছে। উতসবের সময় এখনও ইহুদীরা ভেড়ার শিঙ্গা বাজায়। এবং এর পূর্ববর্তী যুগ হচ্ছে বৃষ রাশির যুগ। যা হচ্ছে ষাড়। তাহলে ষাড়ের পূজার ব্যাপারটা পুরাতন যুগ শেষে নতুন যুগের আগমনের কথাই বলেছে। জেসাসের আগমন ঘটেছে পাইসিস যুগ বা মীন যুগের শুরুতে। এবং বাইবেলেও মাছের অনুষঙ্গটি খুব বেশী। যেমন জেসাস ৫০০০ মানুষকে খাওয়ালেন রুটি এবং দুটি মাছ দ্বারা। এখনও পাশ্চাত্যে মানুষ তার গাড়ির পেছনে জেসাস ফিস লাগিয়ে থাকে। জেসাস মোজেস এর মত রা সবাই সূর্যের রিপ্রেজেন্টেশন। বিভিন্ন এইজের কারনে একবার মোজেস একবার জেসাস বলা হিসেবে ধরা হয়েছে, সেভাবেই পৌরাণিক কাহিনীগুলো লেখা হয়েছে। এই এইজ সম্পর্কে বাইবেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ন ভার্স হচ্ছে লুক(২২:১০)। এখানে শিষ্যদের কখন শেষ পাসওভার হবে এই প্রশ্নের জবাবে জেসাস বলেন:

"Behold, when ye are entered into the city, there
shall a man meet you bearing a pitcher of water...
follow him into the house where he entereth in. "


এবং মীন যুগের পরের যুগ হচ্ছে কুম্ভ যুগ। তাকে ওয়াটার বিয়ারার ও বলা হয়, কারন পৌরাণিক গাথা অনুসারে এই রাশি বসন্তে বৃষ্টি আনে। এবং এর ছবি সবসময় একজন পানির পাত্রবাহক হিসাবে আকা হয়। ভার্সটিতে সেই পানির পাত্রবাহক কে ই অনুসরন করতে বলা হচ্ছে। যা পরবর্তী এইজ যে কুম্ভ হবে সেটারই বিবৃতি।

জেসাসের পুরো চরিত্রটিই এভাবে পৌরাণিক গাথা এবং আ্যাস্ট্রোলজিক্যাল মেটাফোরের সমন্বয়ে তৈরী। তাকে প্রধানত মিশরীয় সূর্য দেবতা হোরাসের আদলে গড়ে তোলা হয়েছে। হোরাসের বিবরন আগের পর্বেই দিয়েছি। হোরাসের যে জীবনকাহিনী মিশরের লুক্সর মন্দিরের দেয়ালে ছবি এবং হায়ারোগ্লিফিক্সে মাধ্যমে খোদাই করা আছে ৩৫০০ বছর আগে থেকে। জুডো ক্রিশ্চিয়ান ধর্মের সাথে মিশরীয় সহ অনেক পেগান ধর্মের অভাবনীয় মিল পাওয়া যায়। ওল্ড টেস্টামেন্টে এরকম উদাহরন আরও আছে। যেমন মহাপ্লাবন এবং নৌয়ার নৌকা। এটি প্রাচীন অনেক ধর্মেই পাওয়া যায়। উদাহরন স্বরুপ গিলগামেশের কাহিনী যা ৪৬০০ বছরের পুরোনো। গিলগামেশের কাহিনীটি ,ওল্ড টেস্টামেন্টের কাহিনীর একেবারেই আইডেন্টিক্যাল। যেমন ঘুঘু পাখি পাঠানোর মাধ্যমে শুকনা যায়গা সন্ধান করা হয়েছিল। আরেকটি গুরুত্বপূর্ন গল্প হচ্ছে মোজেস এর জন্ম কাহিনী।

মোজেস জন্মের পর তার মা শিশু হত্যা থেকে বাচতে একটি ঝুড়িতে করে মোজেসকে নদীতে ভাসিয়ে দেন। তারপর রাজপরিবারের একজন মহিলা তাকে বাচান।

এই গল্পটিও প্রাচীন পেগান ধর্মগুলোতে পাওয়া যায়,যেমন আক্কাদের সারগনকেও
জন্মের পর তার মা শিশু হত্যা থেকে বাচাতে ঝুড়িতে করে পানিতে ভাসিয়ে দেন। তারপর রাজপরিবারের মহিলা আক্কী তাকে বাচিয়ে তোলেন।

সিনাই পর্বতে মোজেস এর টেন কমান্ডেন্টস প্রাপ্তিরও একই অবস্থা। এটিও ওল্ড টেস্টামেন্টের একটি পেগান আ্যাডাপ্টেশন।

যেমন ভারতে মানু এরকম ব্রহ্মা কতৃক নির্দেশাবলী পেয়েছিলেন।

ক্রীটের মিনোস ডিক্টা পাহাড়ে জিউসের কাছ থেকে নির্দেশাবলী পেয়েছিলেন

মিশরে মিসেস পেয়েছিলেন নির্দেশাবলী, এবং মোজেস এর মতই তা পাথরে খোদাই করা ছিল।

আর টেন কমান্ডেন্টস এর পুরোটাই মিশরীয়দের বুক অফ ডেথের ১২৫ নং মন্ত্র থেকে তুলে আনা হয়েছে।
যেমন
বুক অফ ডেথের I have not stolen" ওল্ড টেস্টামেন্টে হয়েছে"Thou shall not steal,"


বুক অফ ডেথের"I have not killed" হয়েছে "Thou shall not kill,"


বুক অফ ডেথের"I have not told lies" হয়েছে "Thou shall not bare
false witness" ইত্যাদি।



প্রাথমিক যুগের খ্রীষ্ঠান ঐতিহাসিক রাও এই পেগান ধর্মের সাথে মিল গুলির ব্যাপারে সচেতন ছিলেন। যেমন প্রাচীনতম ক্রীশ্চান ঐতিহাসিকদের মাঝে অন্যতম জাস্টিন মারটর লিখেছেন
"যখন আমরা বলি, জেসাস ক্রাইস্ট, আমাদের শিক্ষক, যৌনমিলন ব্যাতিরেকে জন্মেছেন, ক্রুসিফাইড হয়েছিলেন, এবং পুনুরজ্জীবিত হয়েছিলেন, আমরা ভিন্ন কিছু বলি না যা জুপিটারের মানবী প্রনয়ের ফলে সৃষ্ট সন্তানদের সম্পর্কে তাদের বিশ্বাসীরা যা বলে"।

অন্যজায়গায় তিনি গ্রীকদের ক্রিশ্চিয়ানিটির দিকে উদ্বুদ্ধ করতে গিয়ে বলেছেন,

"তিনি জন্মেছিলেন কুমারী মাতা হতে, সুতরাং তাদের এটি বিশ্বাসে অসুবিধা হবে না যেহেতু তারা মেনে নেয় পার্সিউসকে"

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য পার্সিউস , পৌরাণিক গ্রীক বীর,তিনিও কুমারী মাতার সন্তান ছিলেন।

জেসাস ক্রাইস্টের জীবন কাহিনী যেভাবে অলৌকিকতা দিয়ে পরিপূর্ন ,তিনি সত্যিই থাকলে ইতিহাসে তার অসংখ্য উল্লেখ থাকার কথা।

প্রায় ৬০ জন ঐতিহাসিকের লেখা পাওয়া যারা জেসাসের সমসাময়িক, ভূমধ্যসাগরীয় এলাকার। এর মাঝে ৫৬ জনের লেখায় জেসাসের কোনো উল্লেখ নেই।

বাকি চারজনের প্রথম ৩ জন হচ্ছেন প্লিনি দ্যা ইয়াংগার, স্যুটনিয়াস, ট্যাকটিয়াস।
তাদের লেখায় জেসাস ক্রাইস্ট নামক কোনো ব্যাক্তির কথা বলা নেই। বাইবেলে জেসাসের বর্ননার কিছুই তাদের লেখায় উপস্থিত নেই।

তাদের লেখায় শুধু বারকয়েক "ক্রাইস্ট" শব্দটি উল্লেখ করা আছে। আর শব্দটি দ্বারা ঐ ঐতিহাসিকরা কোনো ব্যাক্তিকে বোঝান নি। ক্রাইস্ট শব্দের শাব্দিক অর্থ তৈলাক্ত ।এই শাব্দিক অর্থেই তারা ব্যবহার করেছেন শব্দটি।


শেষজন হচ্ছে জোসেফাস।গত শতকে যখন নিরিশ্বরবাদী দর্শন তুমুল জনপ্রিয়তা লাভকরেছিল ইউরোপের পন্ডিত সমাজ, তখন চার্চ কতৃক এই ইতিহাসটি প্রচার করা হয়। যেটি গত শতকেই জালিয়াতি হিসেবে প্রমান হয়।ব্লগার বিবর্তনবাদীর কল্যানে আমরা গোয়েবলসীয় পদ্ধতি সম্পর্কে সচেতন। এটি তেমন একটি প্রচেষ্টা ছিল কিন্তু সফল হয় নি।

জুডো ক্রিশ্চিয়ান ধর্ম সম্পূর্নভাবেই পেগান ধর্ম থেকে ধার করা,মূলত মিশরীয় ধর্ম এই দুটি ধর্মকে প্রভাবিত করেছে।এবং মিশরীয় ধর্মকে এই ধর্মদুটোর ভিত্তি বলা যায়।

জেসাস ক্রাইস্ট অন্যান্য পৌরাণিক চরিত্রের মতই একটি মিথ ছাড়া আর কিছুই নয়। এমনকি প্রাথমিক ক্রীশ্চানরাও এটি জানত। পেগান এবং হিব্রুদের অত্যাচারের ফলে অত্যাচারিত রা ক্রীশ্চান হয়ে যায়। এরকম ঘটনা ইতিহাসে বারবার ঘটেছে। যেমন উপমহাদেশে নিম্ন বর্নের হিন্দুরা অত্যাচার হতে বাচতে দলে দলে ইসলাম গ্রহন করেছিল।ধর্মের নামে ছড়ি ঘোরানোর হাত থেকে বাচতে এরকম ঘটনা আগেও ঘটেছে। যেমন মিশরীয় দের ধর্মের অত্যাচারই হিব্রুদের জুডাইজমের দিকে ধাবিত করে। দীর্ঘদিন মিশরীয়দের সংস্পর্শে থাকার কারনেই হিব্রু বা ইহুদী ধর্ম মিশরীয় ধর্ম দ্বারা এতটা প্রভাবিত। রোমান শাসক কন্স্টানটিন খ্রীষ্ঠান ধর্মকে রাজনৈতিক কারনে ব্যবহার করেন তার রাষ্ঠ্রের স্ট্যাবিলাইজেশনের জন্যে। আলেকজান্দ্রিয়াতে ক্রীশ্চান পেগান রায়ট পেগান দের ভালোই ভয় পাইয়ে দিয়েছিল। তাছাড়া খ্রীষ্ঠান ধর্মগুরুরা রাজনৈতিক ক্ষমতার জন্যে বিশ্বাসীদের লেলিয়ে দিচ্ছিলেন। কনস্টানটিন তাই খ্রীষ্ঠান ধর্মকে সুসংহত করেন। জেসাস ক্রাইস্টের পৌরাণিক গাথাকে ঐতিহাসিক ঘটনায় রুপান্তরের চেষ্টা করা হয়, যাতে বিশ্বাসীদের দলে টানতে একটি শক্তিশালী আধ্যাত্নিক ভিত্তি থাকে। জেসাস ক্রাইস্টের জীবন কাহিনী আর দশটা মিথের মতই বিভিন্ন মানুষের হাতে লেখা হয়েছিল। অনেক আলোচনার পর ৪ টিকে চুড়ান্ত হিসেবে গ্রহন করা হয়। কনস্টানটিনের কল্যানেই ক্রিশ্চিয়ানিটি রাজনৈতিক ক্ষমতা লাভ করে, যা মূলত তিনটি চার্চ কেন্দ্রিক ছিল। প্রাথমিক সময়ে ভ্যাটিকান নিরঙ্কুশ ছিলো না। ক্ষমতা সমান ভাবে ভাগ হয়ে তিনটি চার্চের কাছে যেত। একটি ভ্যাটিকান, একটি আলেকজান্দ্রিয়ায় এবং অপরটি বাইজেন্টাইনে। এভাবেই ধর্ম হয়ে পরে রাজনৈতিক হাতিয়ার।

জেসাস ক্রাইস্টের ঐতিহাসিকতা -১

১.

দশ হাজার বছর আগেই মানুষ বুঝেছিল পার্থিব জীবনে সূর্যের ভূমিকা। সূর্য মানুষ্কে শুধুই আল দিত না, সাথে সাথে নিরাপত্তার বোধ, উষ্ণতা ইত্যাদিও দিত। সেকারনেই প্রাচীন সভ্যতাগুলতে সূর্যকে আলাদা মর্যাদায় দেখা হত। তারা বুঝে ছিল সূর্য ছাড়া শস্য ফলবে না, পার্থিব জীবন টিকে থাকতে পারবে না। এই সত্য গুলোই মানুষকে ধাবিত করেছে সূর্যকে সবচেয়ে সম্মানিত একটি নিমিত্তে পরিণত করতে।

মানুষ আকাশের নক্ষত্র সম্পর্কেও ভালোই জানত। আকাশ পর্যবেক্ষনের ফলেই তারা শিখেছিল নক্ষত্রমন্ডলীর গতি, বছরের বিভিন্ন সময়ে নক্ষত্রের অবস্থান ইত্যাদি। যার ফলে পূর্নিমা বা অমাবশ্যার মত ঘটনাগুলোর মাঝে সময়ের পর্যায় তারা নিঁখুত ভাবে নির্নয়ে সমর্থ হয়।

এই প্রবনতাই তাদেরকে বছরের বিভিন্ন সময়ে আকাশের অবস্থা লিপিবদ্ধ করে রাখতে উতসাহী করে। এই তালিকাটি জন্ম দেয় কন্সটেলেশনের।
নীচের ছবিটি হচ্ছে ক্রস অফ জোডিয়াক, মানুষের ইতিহাসে অন্যতম প্রাচীন কনসেপচুয়াল ছবি।


এই যোডিয়াক আমাদের অনেকগুলো তথ্য দেয় ...
এখানে দেখা যায় সূর্য কিভাবে একটি বছরে বারোটি প্রধান রাশির মধ্য দিয়ে পরিভ্রমন করে। এটা আরও প্রকাশ করে ১২ টি মাস, ৪ টি মৌসুম, জলবিষুব,উত্তর অয়নান্ত ইত্যাদি। রাশিচক্রের ব্যাপারে একটি গুরুত্বপূর্ন কথা হচ্ছে এই রাশিগুলোকে বিভিন্ন মানবীয় বা প্রাকৃতিক উপাদানের সাথে প্রাচীন যুগের মানুষরাই সম্পৃক্ত করে গেছে। এবং সেই নাম গুলো আমরা এখনও ব্যভার করি। এবং প্রাচীন সভ্যতা সমূহ শুধুমাত্র নক্ষত্র সমূহ পর্যবেক্ষণ করেই ক্ষান্ত হয় নি, তারা বিভিন্ন নক্ষত্রমন্ডলীকে বিভিন্ন পার্থিব উপাদানের নামে নামকরন করেছে এবং তাদের আকাশের গতিবিধিকে সম্পৃক্ত করেছে বিভিন্ন পৌরাণিক কাহিনীর মাধ্যমে।
এবং সূর্যের জীবনদাত্রী গুনাবলীর কারনে সূর্যকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে ঈশ্বরের সাথে। মানবজাতির ত্রাতা হিসেবেই সূর্যকে দেখা হত। এবং ১ ২ টি রাশিকে দেখা হত ঈশ্বরের সহযাত্রী হিসেবে। যারা সূর্যের সাথে ভ্রমন করে।(বছরের বিভিন্ন সময়ে সূর্য আকাশের উত্তর পূর্ব থেকে দক্ষিন পূর্বের বিভিন্ন যায়গায় উদিত হয়। এই উদয়ের সময় মোটামুটি ৩০ দিন পরপর সূর্য একটি নতুন নক্ষত্রমন্ডলীর কাছে উদিত হয়। প্রাচীন পৃথিবীতে মাসের ধারনা এভাবেই এসেছে )। এই সকল রাশি সমূহকে নিয়েও নানা পৌরাণিক গল্প প্রাচীন সভ্যতা গুলো তৈরী করেছিল। মজার ব্যাপার ছিল গল্প গুলো পুরোপুরি গাঁজাখুরি ছিল না।প্রায়ই আকাশের রাশি সমূহের বিভিন্ন গতিকে মেটাফোরিক্যালি এই পৌরাণিক কাহিনীতে প্রকাশ করা হত।

যেমন আ্যাকুআরাস, পানির ধারক, যিনি বসন্তকালে বৃষ্টি নিয়ে আসতেন।


২.
নীচের ছবিটি হোরাসের। যিনি মিশরীয় দেবতা। তার পূজা হত খ্রীষ্টপূর্ব ৩০০০ সালে। তিনি ছিলেন সূর্য দেবতা।




তার জীবন কাহিনী যেভাবে বর্ননা করা আছে প্রথম দৃষ্টিতে মনে হয় একেবারেই টিপিক্যাল মিথলজি। কিন্তু সাবধানে পরীক্ষা করলে বোঝা যায় বোঝা যায় পৌরাণিক গল্প গুলো আকাশে সূর্যের অবস্থান এবং গতি সম্পর্কিত বিভিন্ন তথ্যের মেটাফোর।

মিশরীয় পূরাণ যেগুলো হায়ারোগ্লিফিক্সে পিরামিডের গায়ে লেখা ছিল সেখান থেকে হোরাস সম্পর্কে অনেক কিছুই জানা যায়।

যেমন হোরাসের একজন চিরশত্রু দেবতা ছিলেন। যার নাম হচ্ছে সেট। সেট ছিল অন্ধকারের দেবতা। প্রতিদিন সকালবেলা হোরাস সেটের সাথে লড়াইয়ে জিতে যেত, যার ফলে সূর্য উঠতো, অপরদিকে সন্ধ্যায় সেট জিতে যেত হোরাসের বিপক্ষে। যার কারনে রাত্রি নামত।

এখানে গুরুত্বপূর্ন ব্যাপার হচ্ছে এই আলো বনাম অন্ধকার, অথবা ভালো বনাম খারাপ এটি সেই প্রাচীন কাল থেকেই নানাভবে নৈতিক বা সামাজিক অনুসঙ্গে প্রকাশিত হয়ে আসছে, এবং এখনও নয়। চৈনিক দার্শনিকরাও বিশেষ করে তাওবাদীরা এই ব্যাপারে বিশদ আলোচনা করেছেন।

হোরাসের সম্পূর্ন জীবন কাহিনীর সারাংশ নিম্নরুপ:

হোরাস:
জন্মদিবস : ২৫ শে ডিসেম্বর
মাতা আইসিস কুমারী ছিলো, অলৌকিক ভাবে কুমারী মাতার গর্ভে তার জন্ম
তার আগমন সংবাদ দিয়েছিল পূর্ব আকাশের উজ্জ্বল নক্ষত্র
তার জন্মের পর তিনজন রাজা তাকে আশীর্বাদ করেন
১২ বছর বয়সেই তিনি শিক্ষাদান শুরু করেন মানুষের মাঝে
৩০ বছর বয়সে একজন জ্ঞানী আনুপ দ্বারা সিদ্ধি লাভ করেন এবং তার নিজস্ব মত প্রচার করা শুরু করেন
তার ১২ জন সহচর ছিলো
অনেক অলৌকিক ক্ষমতা তার ছিলো যেমন অসুস্থকে সুস্থ করা, পানির উপর হাটা
টাইফন দ্বারা বিশ্বাসঘাতকতার স্বীকার হন, এবং ক্রুশকাঠে প্রাণ দেন, এবং মৃত্যুর তিন দিন পুনুরজ্জীবিত হন


ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে বিভিন্ন সভ্যতার দেবতাসমূহের মাঝে একই মিথলজিক্যাল স্ট্রাকচার দেখা যায়,
যেমন
ফ্রাইজিয়ার এটিস
ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ জন্ম
কুমারী মাতা নানা হতে জন্ম
ক্রুসিফাইড হয়েছিল
মৃত্যুর তিন দিন পর পুনুরজ্জীবিত হয়েছিল

ভারতের কৃষ্ণা

কুমারী দভাকি হতে জন্ম
পূর্বাকাশের নক্ষত্র তার আগমন বার্তা জানিয়েছিল
অলৌকিক ক্ষমতা সম্পন্ন ছিল
সহচর ছিল
মৃত্যুর পর পুনুরজ্ঝীবন


গ্রীসের ডায়ানসিস
ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ জন্ম
কুমারী মাতা
অলৌকিক ক্ষমতা ছিল যেমন পানি কে দ্রাক্ষারসে রুপান্তর
তাকে কিং অফ কিংস বলা হত
মৃত্যুর পর পুনুরজ্জীবন

পারস্যের মিত্রা
ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ জন্ম
কুমারী মাতা
১২ জন ভক্ত
মৃত্যুর তিন দিন পর পুনুরজ্জীবিত
এবং ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হচ্ছে তার পূজা হত রবিবার, সানডে ওরশিপ বলা হত

এখানে ব্যাপার হচ্ছে বিভিন্ন সময়ে অসংখ্য সভ্যতার অসংখ্য দেবতা এই একই ধরনের বর্ননা পাওয়া যায়।

৩.


সুতরাং প্রশ্ন আসে কেনই বা কুমারী মাতা, কেনই বা ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ জন্মদিবস??কেনই বা মৃত্যুর পর পুনুরজ্জীবন এবং কেনই বা ১২ জন ভক্ত??


এই প্রশ্নের উত্তর জানার জন্যে সবচেয়ে নতুন এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় সোলার মেসায়াহ কে নিয়ে আলোচনা করা যাক


জেসাস ক্রাইস্ট:

জন্মেছিলেন ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ বেথেলহেমে
কুমারী মাতা মেরীর গর্ভে
তার আগমন বার্তা ঘোষিত হয়েছিল পূর্বাকাশের নক্ষত্রের মাধ্যমে
তিনজন রাজা অথবা মেজাই তাকে আশীর্বাদ করেছিল
১২ বছর বয়সে তিনি শিক্ষা দেয়া শুরু করেন
৩০ বছর বয়সে জন দ্যা ব্যাপটিস্ট দ্বারা ব্যাপটাইজড হন
তার ১২ জন ভক্ত ছিলো
তিনি অলৌকিক ক্ষমতা প্রদর্শন করেন যেমন অসুস্থ কে নীরোগ করা,পানির উপরে হাটা ইত্যাদি
ভক্ত যুদাসের দ্বারা বিশ্বাস ঘাতকতার শিকার হন
ক্রুসিফাইড হন, এবং মৃত্যুর তিনদিন পর পুনুরুজ্জীবিত হন



প্রথমেই বার্থ সিকোয়েন্সটি সম্পূর্নভাবে এস্ট্রোলজিক্যাল।

পূর্বাকাশের তারা টি হচ্ছে সিরিয়াস, রাতের আকাশের উজ্জ্বলতম নক্ষত্র। ডিসেম্বরের ২৪ তারিখ সিরিয়াস ,কালপুরুষের বেল্টের মাঝে অবস্থানকারী তিনটি উজ্জ্বল নক্ষত্রের সাথে একই রেখায় অবস্থান করে। এই তিনটি নক্ষত্রকে প্রাচীন কাল থেকেই থ্রী কিংস বলা হত।
সিরিয়াস এবং ত্রী কিংস যে সরলরেখায় অবস্থান করে, সে সরলরেখাটি ২৫ তারিখের সূর্যোদয়ের স্থানকে নির্দেশিত করে। অথবা তারা ঘোষনা করে "সূর্যের জন্মকে"(মেটাফোরিক্যালি)। আর ভার্জিন মেরী হচ্ছে ভার্গো কন্সটেলেশন। ল্যাটিনে ভার্গো মানে হচ্ছে কুমারী। ভার্গো কে আরও বলা হয় হাউস অফ ব্রেড। এবং ভার্গো রাশিটির ছবিটি লক্ষ করলে দেখা যাবে একজন কুমারী একটি গম পাতা ধরে রেখেছে। এবং হিব্রু বেথেলহেম মানে হচ্ছে হাউস অফ ব্রেড। সুতরাং বেথেলহেম আকাশের একটি রাশিকে নির্দেশ করে মর্তের কোনো জায়গা নয়। আরেকটি গুরুত্বপূর্ন ঘটনা ঘটে ২৫ শে ডিসেম্বরে। আমরা জানি সূর্যের উত্তর আয়নায়ন থেকে দক্ষিন আয়নায়নে দিনের দৈর্য্য ক্রমাগত কমতে থাকে উত্তর গোলার্ধের প্রেক্ষাপটে(পারসিক,মিশরীয়,রোমান,গ্রীক,ভারত,প্যালেস্টাইন সবগুলো দেশই উত্তর গোলার্ধে অবস্থিত)। সূর্য ক্রমাগত দক্ষিনে সরে যেতে থাকে এবং কৃশ হয়ে পরতে থাকে। সূর্যের এই ক্রমাগত ক্ষীনতর আকৃতি লাভ প্রাচীন মানুষদের কাছে সূর্যের মৃত্যুর প্রতীক ছিল। ডিসেম্বরের ২২ তারিখ সূর্য আকাশের সর্বনিম্ন বিন্দুতে পৌছয়, এবং সূর্য সবচেয়ে কৃশ আকৃতি ধারন করে। এখানে খুব মজার একটি বিষয় ঘটে। সূর্যের দক্ষিন মুখী গতি বন্ধ হয়ে যায়। ৩ দিন সূর্য একই অবস্ঠানে থাকে। এরপর ডিসেম্বরের ২৫ তারিখ সূর্য উত্তর দিকে ১ ডিগ্রী সরে আসে। এবং সূর্যদয় হয় ক্রক্স নক্ষত্রমন্ডলীর কাছে, যে নক্ষত্রমন্ডলীর আকৃতি ক্রুশের মত। সেজন্যেই সূর্যের মৃত্যু হয় ক্রসে এবং তিন দিন পরে পুনুরজ্জীবিত হয়।

একারনেই জেসাস ক্রাইস্ট এবং অন্যান্য সৌর দেবতারা একই বর্ননা শেয়ার করে।

এবং জেসাসের সাথে ১২ জন ভক্ত হচ্ছে ১২ টি রাশি, যার মধ্যদিয়ে সূর্য সারা বছর পরিভ্রমন করে।

ধর্মীয় অন্ধতা এবং আমাদের বানরায়ন -২

ধর্মীয় দার্শনিকরা যারা ধর্মকে নিরন্তরভাবে বিজ্ঞানময়;) করে তোলার ম্যামথ টাস্ক কাধে নিয়েছেন তাদের অধ্যাবস্যায়ের প্রতি পূর্নশ্রদ্ধা রেখেই আজকের আলোচনা শুরু করছি।

প্রায়ই বিভিন্ন যায়গায় বলতে শুনি সূচের মধ্য দিয়ে উট চলে যাবার ব্যাপারটি। এটি আমি প্রথম পড়েছিলাম আল কোরান দ্যা চ্যালেন্জ নামের একটি বইতে। বিভিন্ন সময় এই ব্লগেও অনেককে কথাটা বলতে শুনেছি। কথাটা সম্ভবত হাদীসের, কুরআনেরও হতে পারে। আমি সেই হাদীস বা কুরআনের রেফারেন্স দিচ্ছি না, আমি অলস মানুষ ঘেটে বের করতে ইচ্ছা করছে না। যাই হোক সেখানকার সার কথা গুলো হচ্ছে:


আল্লাহ তাআলা চাইলে সূচের ফুটো দিয়ে উট প্রবেশ করাতে পারেন

ধর্মীয় দার্শনিকদের কনক্লুশান:

সুচের ফুটোয় অনেক কম স্থান বিদ্যমান।তার মধ্য দিয়ে উট যাবার কথা বলার মাধ্যমে বোঝানো হয়েছে ব্ল্যাকহোল বা কৃষ্ণবিবর কে, কারন কৃষ্ণবিবরও ছোট জিনিস যার মাঝে বড় বড় বস্তু পতিত হয়।

বিজ্ঞানের বক্তব্য:

এখানে একটা বিষয় বলা প্রয়োজন আলোচনা শুরুর আগে সেটা হচ্ছে, যেহেতু এখানে ধর্মীয় স্ক্রীপচারকে বিজ্ঞানের সাথে মেলানো হচ্ছে সুতরাং বিজ্ঞানের দাবী থাকবে বিজ্ঞানের সংজ্ঞাগত বিশুদ্ধীর। এর অর্থ হচ্ছে যখন বিজ্ঞানের সাথে মেলানোর চেষ্ঠা হচ্ছে সুতরাং বিভিন্ন বিষয়কে বৈজ্ঞানিক দৃষ্টিকোন থেকে দেখতে হবে। সমস্যা হচ্ছে অনেক সময়ই ধর্মীয় বিজ্ঞান দার্শনিকরা এই জায়গায় পিছলানো শুরু করেন। তারা বিজ্ঞানের তত্ব ব্যাখ্যায় বিজ্ঞানের পরিভাষা ব্যবহারে বেশী একটা উতসাহী হন না। এর প্রধান কারন হচ্ছে বিজ্ঞানের পরিভাষা গুলো সাধারনত ওয়েল ডিফাইন্ড থাকে। সেখানে এদিক সেদিক ধোয়াশামূলক ব্যাখ্যা করা যায় না।
আরেকটি ব্যাপার ,বিজ্ঞান কিন্তু তত্ব নিরপেক্ষ বাস্তবতা স্বীকার করে না। তাই সাধারন জীবনে সত্য আর বৈজ্ঞানিক সত্য নামে সাধারনত যে বিভাজনটা হয়ে থাকে তা পুরোপুরি ইনভ্যালিড। হ্যা অনেক বৈজ্ঞানিক সত্য দৈনন্দিন জীবনে আমাদের অভিজ্ঞতার পরিপন্থী। এখানে অভিজ্ঞতা শব্দটি খুবই গুরুত্বপূর্ন কারন অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের পর্যবেক্ষনের প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতার কারনে অনেক ঘটনা আমাদের কাছে যেভাবে আ্যাপিয়ার করে সত্যিকার অর্থে সেভাবে ঘটে না।সুতরাং অনেক ক্ষেত্রে আমাদের অভিজ্ঞতা ইলিউশন ছাড়া আর কিছুই না।যেমন আমরা কখোনই দৈনন্দিন জীবনে গতিশীল জড় কাঠামোতে শ্লথ ঘড়ির সম্মুখীন হই না।

এবার দেখা যাক সুচের ফুটা আর ব্ল্যাকহোলের পার্থক্য কোথায়।

সূচের ফুটা দিয়ে উট যেতে পারে না কারন উট ,সুচের ফুটার তুলনায় অনেক বড় স্থান দখল করে।

ব্ল্যাকহোলের আলোচনা শুরু করার আগে আমরা এই স্থান ব্যাপারটিকে আরেকটু rigorously সংজ্ঞায়িত করতে চাই।ইউক্লিডিয় জ্যামিতি অনুসারে স্থান শুন্যমাত্রিক বিন্দুসমূহের ত্রিমাত্রিক বিস্তৃতি। এবং ইউক্লিডিয় স্থান সমতল। এই বক্তব্যের অনেকগুলো কনসিকোয়েন্স আছে,
১.পিথাগোরাসের উপপাদ্যের সত্যতা(তিনমাত্রায় পিথাগোরিয়ান উপপাদ্য)
২.দুটি বিন্দুর মাঝে সর্বনিম্ন দুরত্ব হচ্ছে ঐ বিন্দু দুটোকে সংযোগকারী সরলরেখা
৩.চিরায়ত ,অর্থাত এই ইউক্লিডিয়ান স্থান অনেকটাই চিরায়ত এই অর্থে এই স্থান পরিপার্শ্ব দ্বারা প্রভাবিত হয় না।এই অনুসিদ্ধান্ত ইউক্লিডিয়ান স্থানকে একটি আ্যাবস্ট্রাক্ট অথবা সংজ্ঞাভেদে অবস্তুগত ধারনায় পর্যবাসিত করে।

এখন ব্ল্যাকহোলের আলোচনা শুরু করবার আগে আমাদের আরেকটু স্থানের সংজ্ঞার গভীরে যেতে হবে। কারন ব্ল্যাকহোল জেনারেল রিলেটিভিটির একটি প্রতিফল। আর জেনারেল রিলেটিভিটির ভিত্তি হচ্ছে অইউক্লিডিয় জ্যামিতি।

অইউক্লিডিয় জ্যামিতি টা কি?

যারা জ্যামিতি পড়েছেন সবাই ইউক্লিডের জ্যামিতির সাথে পরিচিত। ইউক্লিডের জ্যামিতিতে পাচটি স্বীকার্য বিদ্যমান। স্বীকার্য হচ্ছে প্রমান ব্যাতিরেকে যে ধারনা গুলোকে স্বীকার করে নেয়া হয়। ইউক্লিডের পঞ্চম এবং বহুল বিতর্কিত স্বীকার্যটি হচ্ছে

"যদি একটি সরলরেখা অপর দুইটি সরলরেখার উপর পতিত হয় তাহলে যে পার্শ্বে উত্পন্ন অন্ত:স্থ কোন গুলোর সমষ্টি দুই সমকোনের কম হবে সেই পার্শ্বে রেখাদুটোকে অনির্ধারিতভাবে বর্ধিত করলে রেখাদুটো পরস্পরকে ছেদ করবে"

স্বীকার্যটি যদি বুঝতে সমস্যা হয় তাহলে এই স্বীকার্যের ভিন্নরুপ গুলোর একটি উল্লেখ করছি(এটি প্লেফেয়ারের স্বীকার্য হিসেবে পরিচিত)
"যদি একটি সরলরেখা দুইটি সমান্তরাল সরলরেখার একটিকে ছেদ করে তাহলে অপরটিকেও ছেদ করবে"

আসলে এই স্বীকার্যের মুল নির্যাস হচ্ছে সমান্তরাল সরলরেখা পরস্পরকে কখোনোই ছেদ করবে না।

এখন অইক্লিডিয় জ্যামিতিতে এই স্বীকার্যটি সত্য নয়।অর্থাত অইউক্লিডিয় জ্যামিতিতে সমান্তরাল সরলরেখাসমূহ পরষ্পরকে ছেদ করে। এই কথা দেখে আত্কে উঠবার কোনো কারন নেই,পৃথিবীর পৃষ্ঠ একটি অইউক্লিডিয় তল,দ্রাঘিমা রেখাগুলো সমান্তরাল কিন্তু তারা মেরুবিন্দুতে পরষ্পরকে ছেদ করে।

অইউক্লিডিয় জ্যামিতি কয়েকটি গুরুত্বপূর্ন কনসিকোয়েন্স:
১.পিথাগোরাসের উপপাদ্য সঠিক নয়
২.দুটো বিন্দুর মধ্যে সর্বনিম্ন দুরত্ব ঐ অইউক্লিডিয় তলের উপর নির্ভর করে। যাকে আমরা জিওডেসিক বলি। যেমন পৃথিবী পৃষ্ঠে কোন সরল রেখা আকা সম্ভব নয় পৃথিবী পৃষ্ঠের বক্রতার জন্যে। পৃথিবী পৃষ্ঠে দুটি বিন্দুর সর্বনিম্ন দুরত্ব হচ্ছে পৃথিবীর কেন্দ্রকে কেন্দ্র করে ঐ বিন্দু দুইটি দিয়ে যাবে এমন কোন বৃত্ত আকা হলে ঐ বৃত্তের পরিধি বরাবর। আন্তর্জাতিক বিমানরুট গুলো যখন নির্নয় করা হয় তখন এই পদ্ধতিতেই করা হয়। এই বৃত্তগুলোকে বৃহত বৃত্ত বলে।
৩।ত্রিভুজের তিন কোনের সমষ্টি দুই সমকোনের সমান নয়। কতটুকু পার্থক্য এটা নির্ভর করে ত্রিভুজের আকৃতির উপর।

এখন পৃথিবীর তলকে কিন্তু ইউক্লিডিয় গোলীয় জ্যামিতি দ্বারাও ব্যাখ্যা করা যায়। কিন্তু এই ক্ষেত্রে একটি যৌক্তিক সমস্যা আছে। এয়ার রুট নির্নয়ের সময় আমরা ইউক্লিডিয় গোলীয় জ্যামিতি ব্যবহার করছি। এবং আমাদের একটি অতিগুরুত্বপূর্ন তথ্য এখানে দরকার ,সেটি হচ্ছে পৃথিবীর ব্যাসার্ধ। এখন ধরা যাক একটি দ্বিমাত্রিক প্রানী গোলকের উপরিতলে বাস করে। যেহেতু সে দ্বিমাত্রিক প্রানী সুতরাং ত্রিমাত্রা সমন্ধে তার কোন ধারনাই নেই। গোলকের ব্যাসার্ধ তার কাছে পর্যবেক্ষনযোগ্য নয়। সুতরাং সে কিভাবে যদি তার বিশ্বের এয়াররুট নির্নয় করতে চায় ,নির্নয় করবে?
গস,বোলাই,রীম্যান এরা এই প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়েই অইউক্লিডিয় জ্যামিতি আবিস্কার করেন।
গানিতিক টার্মে প্রস্তাবনাটি হচ্ছে কোনো তলের বাইরে না গিয়েই তলের বৈশিষ্ঠসমূহ নির্নয় করা।খেয়াল করুন এয়ার রুট নির্নয় করার সময় আমাদের যে গোলকের ব্যাসার্ধ লেগেছিল সেই গোলকের ব্যাসার্ধ কিন্তু তলের বাইরের প্যারামিটার।

এখন জেনারেল রিলেটিভিটি বলে এই মহাবিশ্ব হচ্ছে স্থানকালের অইউক্লিডিয় বিস্তৃতি। অর্থাত স্থানকালের কাঠামো অইক্লিডিয় জ্যামিতি মেনে চলে। বস্তুকনাসমূহ তাদের ভরের কারনে চারপাশের স্থানকালকে বক্র করে দেয়। এবং এই বক্রতাই মহাকর্ষের প্রকৃত কারন।


এখন ছোট স্কেলে অইউক্লিডিয় জ্যামিতি ,ইউক্লিডিয় জ্যামিতিতে আসন্নীকৃত হয়।যে কারনে আমরা অইউক্লিডিয় জ্যামিতির প্রভাবে দৈনন্দিন জীবনে তেমন একটা পর্যবেক্ষন করি না।

এখন আসা যাক ব্ল্যাকহোল প্রসঙ্গে। সেখানে যা হয় তা হচ্ছে,

চন্দ্রশেখর লিমিটের বাইরে এরকম নক্ষত্রের হাইড্রোজেন জ্বালানী যখন শেষ হয়ে যায় তখন তার ভর নিজের উপরই কোলাপস করে। বিপুল পরিমানে ভর কেন্দ্রীভূত হওয়ায় চারপাশের স্থানকালের বক্রতা অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌছায়। এবং আলো সমূহ জিওডেসিক বা সর্বনিম্ন দুরত্বের পথ অতিক্রম করতে গিয়েই নিজের উপরই পতিত হয়। মহাকর্ষ ক্ষেত্রের শক্তিও অস্বাভাবিক পর্যায়ে পৌছায়।

ব্ল্যাখোল কিন্তু স্থানের পরিমানে কম নয়, কেবল বিপুল পরিমান স্থান নিজের উপর বক্র হয়ে আছে। ব্যখোলের যেটা কম সেটা হচ্ছে ঘটনা দিগন্তের ক্ষেত্রফল। সুতরাং ব্ল্যাক হোলে স্থান কম কথাটা অবৈজ্ঞানিক।

কিন্তু সুচের ফুটায় স্থান আসলেই কম।সুতরাং সেখানে উটের প্রবেশ অযৌক্তিক।

এই দুটোর মাঝে মিল খুজে পাওয়া কেবল বিজ্ঞান জানায় ঘাটতিকেই প্রকাশ করে,কোনো মহিমা নয়।


(যদিও আমি ব্যাক্তিগত ভাবে মনে করি উটের সুচের ফুটায় প্রবেশ শুধুমাত্র একটি অসম্ভব ঘটনার মেটাফোর। সর্বশক্তিমানের ক্ষমতা উদাহরন হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এভাবে অনেক লং শটে মেলানোর চেষ্টা অনেকটাই হাস্যকর। বরং হিন্দু ধর্মে ব্ল্যাকহোলের আরও কাছাকাছি বর্ননা পাওয়া যায়। যেমন কৃষ্ণকে বলা হয়েছে সব আলো শোষনকারী। যেটা ব্ল্যাকহোলের জন্যে সত্য।এভাবে ডান বাম করে অনেক কিছুর সাথেই মেলানো যায় বিজ্ঞানকে। যদি কোনোদিন ধর্ম থেকে আগেই বলা হত ভবিষ্যত তত্বের কথা তাহলে বিষয়টি ক্রেডিবিলিটি পেত।কিন্তু সেটা কখোনই হয় না;) )

আমরা বিবর্তনের পথে উল্টোদিকে না হাটি। অন্ধ বানরায়ন না ঘটে আমরা উন্নততর মানুষ হয়ে উঠি এই প্রত্যাশা রাখছি।

ধর্মীয় অন্ধতা এবং আমাদের বানরায়ন -১

১.
চারদিকে অন্ধতার পরিমান এত বেড়েছে,কোনোওভাবেই আর সত্যের দেখা পাওয়া যায় না ।আমি কোনো অবিশ্বাসী মানুষ না,কিন্তু তাই বলে চোখ বন্ধ করে থাকতে জানি না

এইসকল অন্ধতার একটা প্রধান ধারা হচ্ছে ধর্ম ।ধর্মের অপব্যাখ্যায় চার দিক ছেয়ে গেছে ।মুক্ত মনের চর্চা হয় না কোথাও ।বিদায় নিয়েছে বিজ্ঞানমনস্কতা,এবং অন্যান্য বুদ্ধিমত্তার উপহার ।মানুষ থেকে বিবর্তনের ধারার উল্টা পথে মনে হয় যেতে আর বেশী নেই ।পচা নোংরা বানরের দলে পরিনত হচ্ছি আমরা ।

২.
ইদানিং একজাতীয় "মাল্টিপারপাস" সর্বজ্ঞাণী,তথাকথিত বিজ্ঞান দার্শনিকের উদ্ভব হয়েছে,যাদের প্রধান কাজ হচ্ছে,ধর্মীয় পুস্তকে বিজ্ঞান খোজা,আমি বলছি না,ধর্মীয় পুস্তকে বিজ্ঞানের অস্তিত্ব নেই ।কিন্তু আমার আমার আপত্তি হচ্ছে এইসকল অর্ধশিক্ষিত(নৈর্ব্যত্তিক জ্ঞানের ব্যাপারে,কোনো কোনো ক্ষেত্রে "অর্ধশিক্ষিত " শব্দটি তাদের জন্যে কমপ্লিমেন্ট হয়ে যায়)
কাঠমোল্লাদের আধুনিক সংস্করনদের প্রতি ।
তবে সমস্যার গভীরে যাবার আগে কিছু বিষয়ে সংজ্ঞায়ন করাকরিভাবে করা দরকার ।
প্রথম হচ্ছে বৈজ্ঞানিক তত্ব কিভাবে আত্নপ্রকাশ করে,
সকল বৈজ্ঞানিক তত্ব প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে "হাইপোথিসিস" ।
বিজ্ঞানী যখন হাইপোথিসিস দাড় করান,তখন তিনি কোনো একটি প্রাকৃতিক ঘটনাকে ব্যাখ্যার জন্যে কিছু গুরুত্বপূর্ন রাশির মাঝে সম্পর্কস্থাপনের চেষ্টা করেন ।একারনেই বৈজ্ঞানিক তত্ব ভীষনভাবে "দৃষ্টিকোন নির্ভর" ।
সমস্যা হচ্ছে আজকলের এই সব সবজান্তারা বিজ্ঞানকে অস্বাভাবিক(!) গুরুত্ব দিয়ে থাকেন( তিলমাত্র গানিতিক যোগ্যতা না থাকা সত্বেও) ।তারা মনে করেন ধর্মীয় পুস্তকে বিজ্ঞান খুজে পেলেই হলো,ধর্ম মহিমান্বিত হয়ে যাবে,অর্থাত্ বিজ্ঞানকেই সম্মানিত করা হল,এই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি যে কতটা আত্ঘাতী তা মননশীল মানুষ মাত্রই বুঝতে পারে ।
বিজ্ঞানের কোনো তত্ব "পরম" নয়,কারন তত্বগুলো নির্দিষ্ট দৃষ্টিকোন প্রসূত হাইপোথিসিসের ফলাফল মাত্র,তাই বিজ্ঞান সবসময় ই পরিবর্তনশীলতার মধ্য দিয়ে যায় ।চিরায়ত ধর্মের সাথে তার সমন্বয়ের চেষ্টা অবিশ্বাসীদের কাছে যেমন হাস্যকর,বিশ্বাসীদের কাছেও একরকম কটাক্ষের মত ।কারন ধর্ম ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস,অথচ এইধরনের কর্মকান্ড কর্তার বিশ্বাসের গভীরতা নিয়ে যেমন প্রশ্ন তোলে উদ্দেশ্য নিয়েও সন্দিহান করে তোলে ।
৩.
আমি পদার্থবিজ্ঞানে আগ্রহী,তাই কিছু তথাকথিত "দাবীকৃত" সাযুস্যের কথা বলছি।
সবচেয়ে জনপ্রিয় হয়ত নবীজীর মেরাজের ঘটনা(কুরআনে কোনোও অতিরন্জিত বর্ননা পাওয়া যায় না,কেবলমাত্র আলআকসা ভ্রমনের কথা বলা আছে,তা অবশ্য মেরাজের অন্যান্য ঘটনার তুলনায় শিশু)
যেসব ঘটনা দাবী করা হয় বিভিন্ন হাদীসে,তা কেবল মাত্র ঈশ্বরের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপ ছাড়া(যদিও সৃস্টিমুহুর্তের পর তার আর কোনোও কজের হদিস পাওয়া যায় না,মিথলজি ছাড়া) একেবারেই অসম্ভব ।এটা তবুও আমার মেনে নিতে অসুবিধা নেই যে ঐশ্বরিক হস্তক্ষেপেই এটা হয়েছে,আমি বিশ্বাসী সুতরাং আমার অসুবিধা নেই ।(যদিও উদ্ভট মিথলজির অনুপস্থিতি ইসলামের অন্যতম সৌন্দর্য,এবং এই ঘটনা মিথলজির কাতারে পরে যায়)।কিন্তু আমার আপত্তি তৈরী হয় যখন মানুষজন এর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় নেমে পড়ে ।সবচেয়ে বেশী উল্লেখ করা হয় আইনস্টাইন কে(যদিও যারা উল্লেখ করে তাদের মধ্যে অধিকাংশ,আপেক্ষিকতা তো দুরে থাক,আইনস্টাইন বানান পর্যন্ত করতে পারে না ।)
বলা হয় আইনস্টাইন মেরাজের ঘটনা প্রমান করে গেছেন ।(হাসব নাকি কাদব!)
প্রধানত আইনস্টাইনের ১৯০৫ এর "বিশেষ আপেক্ষিক তত্ব "
এই ঔদ্ধত্যের ভিত্তি ।সেই তত্বের গতিশীল স্থানাংক কাঠামোতে ঘড়ির শ্লথ হয়ে যাওয়া সম্পর্কিত প্রেডিকশান এই দাবীর মূল ।(আলোর গতিতে চলা সম্ভব হলে,পর্যবেক্ষক সাপেক্ষে স্থির হয়ে যায় )।কিন্তু একই সাথে পর্যবেক্ষকের ভর স্থির কাঠামোতে দাড়িয়ে থাকা অপর একজন পর্যবেক্ষকের তুলনায় অসীম হয়ে যায়,অসীম ভরের কোনো বস্তুকে গতিশীলের জন্যে দরকার অসীম বল,এবং অসীম সম্পাদিত কাজ ।এজন্যেই আপেক্ষিক তত্ব আলোর বেগ, ভর(স্থির ভর,কারন বিভিন্ন এনার্জি পার্টিকেল গতিশীল অবস্থায় ভর প্রদর্শন করে)সম্পন্ন বস্তুর জন্যে অনুমোদন করে না ।
মজা হচ্ছে বিশেষ আপিক্ষিক তত্ব শুধুমাত্র "জড়" প্রসঙ্গ কাঠামোতে প্রযোজ্য(যেসকল প্রসঙ্গ কাঠামো পরস্পরের সাথে সমদ্রুতিতে চলমান) ।তার মানে ত্বরনিত কাঠামোতে(যেখানে বেগের পরিবর্তন হচ্ছে) বিশেষ আপেক্ষিকতা প্রয়োগ করা যায় না ।করতে হয় জেনারেল রিলেটিভিটি(১৯১৫ সালে আইনস্টাইন কর্তিক আবিস্কৃত,প্রধানত এই তত্বের জন্যে তিনি কিংবদন্তিতে পরিনত হন ।.আর জেনারেল রিলাটিভিটিতে ঘড়ির শ্লথ আচরন এর প্রেডিকশান অনেক অন্যরকম(ত্বরনীত কাঠামোতে,অথবা মহাকর্ষ ক্ষেত্রে ঘড়ি শ্লথ আচরন করে ।এখানে আলাদা লিখলেও জেনারেল রিলেটিভিটি জড় ভর ও মহাকর্ষ ভরের ইকুইভ্যালেন্সের কারনে একসিলারেটেড বডি এবং গ্র্যাভিটেশনাল ফিল্ডের মাঝে কোনো পার্থক্য করে না)।আর আমাদের সবজান্তাদের দৌড় এই পর্যন্ত পৌছেনি(টেনসর আ্যানালাইসিস,নন ইউক্লিডিয়ান জিওমেট্রি,রীমেন সারফেস দিয়ে ফরমুলেটেড তত্ব টি আর যাই হোক,সবজান্তাদের জন্যে নয় )।
জেনারেল রিলেটিভিটিকে অস্বীকার করেও অবশ্য পাড় পাওয়া যায় না ।কারন নবীজী যখন যাত্রা শুরু করেন তখন শুন্যবেগে ছিলেন,আলোর বেগে পৌছাতে হলেও(যদিও অনুমোদিত নয়)
ত্বরন প্রোয়োজন এবং তখনই তা বিশেষ আপেক্ষিকতার হাত থেকে চলে গেছে ।উর্ধাকাশে গিয়ে ও তাকে থামতে হয়েছিলো ,অন্তত আরশে কুদসী দেখার জন্যে ।

৪।
নানা অন্ধতায় আমরা ডুবে থাকি,চারপাশে,শুধু হনুমানের বৃথা আস্ফালন,তবে মুক্তমনের জন্যে এগিয়ে যাবই আমরা ।

মেয়েদের ব্যবচ্ছেদ

মেয়েমানুষদের একেবারে চেনা যায় না ।ব্যাক্তিগত অভিজ্ঞতার গভীরতা একেবারেই শূণ্যের কাছাকাছি হলেও,যতটুকু চিনেছি,যতটুকু জেনেছি,ওরা একেবারেই এলিয়েন সদৃশ ।হয় তারা খুব প্যাচানো জীবন দর্শনে বিশ্বাসী, না হলে তারা প্রচন্ড কনফিউজড ।কারন তাদের সামাজিক ব্যবহারে দুর্দান্ত পরস্পরবিরোধীতা দেখা যায় ।এই পরস্পরবিরোধীতা উদ্দেশ্যমূলক কি না তা নিয়ে আমি নিশ্চিত নই(কেউ নিশ্চিত কি না আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে)।
এই পরস্পরবিরোধীতার উত্স কি তা নিয়ে আমার বন্ধুরা বিভিন্ন কথা বলে ।এর সাথে কি ঐতিহাসিক ঘটনাপ্রবাহের(নারীদের অবদমন করে রাখার ইতিহাস খুবই পেটমোটা) সম্পর্ক আছে কি না তা নিশ্চিত নই আমি।
এটা ঠিক যে মননশীলতার পৃথিবীতে মেয়েদের অর্জন অবিশ্বাস্য ভাবে কম ।পদার্থবিজ্ঞানে মেয়ে নোবেল লরেট আতশ কাচ দিয়ে খুজে বের করতে হয়।একই ঘটনা অন্যান্য মননশীল ধারাতেও ।
এমনকি সাহিত্যে,ইয়েটস,শেক্সপিয়ার,টি এস এলিয়ট,জেমস জয়েস,মানিক,শরত,শামসুর রাহমান ,এদের রাজত্ব ।জেন অস্টিনের নাম মনে আসছে,কিন্তু কখোনোই তলস্তয় কিংবা গোর্কির মত অমরত্ব দেয়া হয় না(হয়ত পাঠকসমাজে,এবং সমালোচককূলে পুরুষের ভীড়ে কেউ কেউ বৈষম্যের গন্ধ খুজে পান,কিন্তু যুক্তিটা একেবাড়েই খোড়া,পা ভাঙ্গা)।
এমনকি কিছু "পেগান" ধর্ম ছাড়া মেয়েরা একেবারেই উপেক্ষিত ।প্যালেস্টাইন বা এর আশেপাশে প্রবর্তিত ধর্মগুলোতে খুজে পাওয়া যায় না কোনো মেয়ে পয়গম্বর ।
এমনকি মিউজিকেও পাওয়া যায় না বব ডিলান,বীটলস,জন মেয়ার,জিমি হেন্ডরিক্স,পিঙ্ক ফ্লয়েড,এরোস্মিথ,আয়রন মেইডেন,মেটালিকা,ক্রীড,চিল্ডরেন অব বডম,ডন ম্যাকলিন দের কোনো ফিমেল প্রতিদ্বন্দী ।
সেলুলয়েডের মাঝে,হিচকক,কুবরিক,স্করসিস দের পাশাপাশি দাড় করানো যায় না কাউকে ।
মেয়েদের এই underachievement এর জন্যে কে দায়ী আমি জানি না।হয়ত আমারা,হয়তো পারিপার্শ্বিকতা তবে অনেক অন্যায় তাদের উপর করা হয়েছে ।হয়তো সেই সকল কারনেই মেয়ে মাত্রই নিরাপত্তাহীনতায় ভূগে ।এই নিরাপত্তাহীনতার কারনেই তাদের মাঝে এই সকল পরস্পরবিরোধীতার উদ্ভব ঘটে ।যার কারনেই তারা হয়ে উঠে দূর্বোধ্য,এবং আত্মবিনাশী ।তারা কেনো কন্ট্রোল ফ্রীক হয়ে উঠে তার জন্যেও এই নিরাপত্তাহীনতা বোধ কে দায়ী করা যেতে পারে ।অবশ্য মেয়েরা ই সবচেয়ে ভালো বলতে পারে,কিন্তু হয় তারা উত্তর জানে না অথবা আমাদের কাছে বলা নিরাপদ মনে করে না ।
কেনো আমরা বিশ্বাসযোগ্য নই সেটার জন্যে অবশ্য বেশী খুজতে হয় না।চারপাশে হাজারটা উদাহরন ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ।তাও বলতে চাই মেয়েদের দুর্বোধ্য আচরন কোনোভাবেই কোনো সুন্দর বয়ে আনছে না।কেবল সন্দেহ এবং অবিশ্বাস বাড়াচ্ছে ।

মেটাল সঙ্গীত

(প্রথমেই বলে রাখি "মেটাল" একটি বিশাল বিষয়। এটি কেবল এক ধরনের গান নয়, এটি একটি না না দর্শনের প্রতিষ্ঠানও বলা যায়। তাই ক্ষুদ্র পরিসরে মেটাল নিয়ে আলোচনা বেশ কঠিন। আরেকটি কথা, এই পোস্ট টি মেটালকে আমি কিভাবে বুঝি সেটাই উপস্থাপনের চেষ্টা করবো। তাই জানরা ডেফিনেশনে ঝামেলা হয়ে যেতে পারে, কারন অনেক জানরার সঠিক ডেফিনেশন নেই। আবার ঐক্যমত্যও নেই। তাই আমি যেভাবে বুঝি সেটাই উল্লেখ করবো। আর ইচ্ছাকৃত ভাবে পার্টিকুলার গান বা ব্যান্ড কে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এটা করেছি কারন যারা মেটাল শ্রোতা নন, তারা হোচট খাবেন। আর আমি চাই আরো বেশী সংখ্যক মানুষ মেটালকে বুঝুক)

মেটালের সাথে আমার পরিচয় অষ্টম শ্রেনীতে । মেটালিকার এন্টার স্যান্ডম্যান। গানটি শুনেই আমি অবাক হয়েছিলাম। কারন গান বলতে যা বুঝতাম তার কিছুই এখানে ছিল না। কিন্তু এমন কিছু ছিল যা আমি আগে কখোনো কোন গানে পাইনি। পরবর্তীতে অসংখ্য মেটাল গান শুনেছি এবং এই মিউজিকটাকে বোঝার চেষ্টা করেছি। যতই বুঝেছি ততই এই মিউজিক সম্পর্কে আমার অনুভুতি শ্রদ্ধাবনত হয়েছে। বুঝেছি এই কর্কশ সুরের পেছনের অনন্ত হতাশার বিভ্রান্ত তরুন মনের কথা।

মেটালের জন্ম এমন একটি সময়ে যখন পৃথিবী যাচ্ছিল এক ভয়াবহ সংকট কালের মধ্য দিয়ে। ভিয়েতনাম যুদ্ধ, কোল্ড ওয়ার, কালোদের উপর নির্যাতন, সবমিলিয়ে বছরের পর বছর নতুন প্রজন্মকে বাবা মারা যে মিথ্যা রুপকথা শুনিয়ে এসেছে তার লজ্জাজনক বস্রহরন। পতিত সময় সবসময়ই মানুষকে উদ্বুদ্ধ করে নতুন কিছু গড়তে। তবে এ গড়া সৃষ্টির গড়া নয়, এ গড়া সর্বাধিক সৃষ্টিছাড়া গড়া।

যখন নতুন প্রজন্মের সামনে একের পর এক আসতে থাকল প্রতিশ্রুত তথাকথিত সত্যের মিথ্যা রুপ , তখন জন্ম নিলো মেটালের গভীরতম মোটিভেশন। "অস্বীকার"। হ্যা ডিনায়েল ছিল মেটালের প্রাথমিক উৎসাহ। চিরকালের সুন্দরস্তব , অসংখ্য সুন্দরতম উপমা, আর সুলেল সুর হঠাৎই পরিণত হল এক নিদারুন ভন্ডামিতে। এই পৃথিবীতে সুন্দর কিছু নেই, সবই কুৎসিত আর ভন্ডামিতে পরিপূর্ন। যদিও টেকনিক্যালী মেটালের জন্ম বলতে বিখ্যাত ডেথ নোটের(আমার স্মৃতি যদি আমার সাথে প্রতারনা না করে থাকে, যদি এই তথ্য ভুল হয় পাঠক আমাকে ঠিক করে দেবেন)জন্ম বোঝায়। কিন্তু মেটালের জন্ম কেবল একটি নতুন উপায়ে গীটার বাজানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, এর সুর, এর কথা সবকিছুই জন্ম দিতে সক্ষম একটি নতুন দর্শনের।

মেটালের জন্ম থেকেই জীবনের অন্ধকার দিক গুলো প্রকট হয়ে উঠে। ডিয়ো কিংবা ডিপপার্পেলকে এ হিসেবে স্যাম্পল হিসেবে দেখা যায়। যে পৃথিবী শুদ্ধ এবং সুন্দর কিছু জন্মদানে ব্যার্থ তাকে পরিত্যাগ করে মেটাল। গানের বিষয় হিসেবে উঠে আসে মানুষের ক্রোধের কথা, হিংসার কথা, লোভের কথা, যৌনতার কথা। মানুষকে যে ভুল যুগযুগ ধরে বোঝানো হয়েছে সেই ভুলেরই প্রায়শ্চিত্ত করে যেন প্রাথমিক মেটাল গান গুলো। গানে অন্ধকার জীবনের কথা উঠে আসে, আসে পতিত শহরতলীর কথা। এর সাথে তুলনা করা যায় কবিতা যখন রোমান্টিক শুদ্ধতা ছেড়ে আধুনিকতার রাস্তায় নেমেছিল, কবিতার বিষয়ে ফুলের চেয়ে আস্তাকূড় প্রাধান্য পেয়েছিল। ফুল শুকিয়ে যায় দুদিনেই। কিন্তু পরম প্রত্যাদেশের মত রাস্তার কোনের আস্তাকূড়টা টিকে থাকে। এই জীবনের পথে তাই আস্তাকূড়ের বাস্তবতাই বেশী "মূলগত"। মেটালের মাঝেও তাই ঢুকে পরে এই বিষয়গুলো।

মেটালের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য সম্ভবত অস্বীকার করার প্রবনতা। মেটাল অস্বীকার করে সব প্রচলিত প্রথার আর সমাজযন্ত্রের পাতানো কাঠামোকে। পতিত সময়ে এই অস্বীকার করার প্রবনতাই সবচেয়ে বেশীবার দেখা গেছে মেটালের মাঝে। আমি বারবার এর উদাহরন দেখতে পাই, "আই ওন্ট ডু হোয়াট ইউ টেল মি টু ডু"(আর্টিস্টের নাম ভুলে গেছি) সম্ভবত মেটালের এই প্রবনতার সাড়বস্তু। এই অস্বীকার প্রবনতা এসেছে পূর্ববর্তী জেনারেশনের প্রতি তীব্র অবিশ্বাস থেকে। যুক্তরাষ্ট্রের অনেক স্টেটে ১৮ বছরে তখন ভোট দেয়া যেত না, কিন্তু ভিয়েতনামে বাধ্যতামূলক যেতে হত। জমে থাকা এই অবিশ্বাস ই মূলত তৈরী করেছে সমাজকাঠামোর সকল উপাদান কে অস্বীকার করানোতে।

যেকোন যুগসন্ধির শিল্প আঘাত করে প্রচলিত বিশ্বাস আর প্রবনতা গুলোকে। এমনটা করেছে আধুনিক কবিতাও। করেছে আধুনিক উপন্যাসও। এমিল জোলার পতিতাপল্লীর সেই নির্মম ইতিহাস কিংবা জেমস জয়েসের ইউলিসিস অথবা ডি এইচ লরেন্সের উপন্যাস গুলি। সুধীনদত্তের নির্বান দেখি আমরা "উটপাখী" তে। বালুতে মুখ গুজে রাখা উটপাখী কে চিত্রিত হয় অন্ধ সমাজ। ঈশ্বর তার কবিতায় পরিনত হন "আরন্যিক নির্বোধের ভ্রান্ত দু:স্বপ্নে"। এই আঘাত কে অন্য একটি পর্যায়ে নিয়ে গেছে মেটাল। যে ঈশ্বরের সৃষ্ট মহাবিশ্বে এত দু:খ, কষ্ট , আর অমানবিকতা, সেই মহাবিশ্বে ঈশ্বর হয়ে পড়েন তীব্র এখরোখা এক স্বৈরাচারী। তাই স্বর্গ থেকে বিতাড়িত স্যাটান হয়ে পরেন যুগের ট্র্যাজিক হিরো। যার স্বাধীনচেতা মনোভাবের জন্যেই স্বর্গ থেকে নির্বাসিত হয়। তাই মেটাল গানেও একটি ইমেজ শয়তানের আদলে তৈরী হয়। তবে সেটিকে সরাসরি স্যাটান হিসেবে যেমন ব্যাবহার করা হয়েছে তেমনি এন্টিগড হিসেবেও উপস্থাপিত হয়েছে। আসলে এই উপস্থাপন ছিল এক ধরনের প্রতীকি প্রতিবাদ। কিছু মানসিক বিকার গ্রস্ত শিল্পী ছাড়া স্যাটানকে আসলেই ক্ষমতার অধিকারী ভাবেন নাই মেটাল শিল্পীরা। ডিয়ো, আয়রন মেইডেন, জুডাস প্রীস্ট, এলিস কুপার সহ অনেকেই গ্রহন করেন এই তীব্রতম প্রতিবাদের ভাষা। ডিয়ো তার সাক্ষাৎকারে এ বিষয়টি ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু এ ব্যাপারটিও ভুলভাবে ইন্টারপ্রেট হয় স্থুলবুদ্ধির সমাজের রক্ষাকর্তাদের কাছে। তারা মেটাল কে দেখা শুরু করেন শয়তানের উপাসনার উপায় হিসেবে। অজি অসবোর্ন এর এলবাম পুড়াতে থাকেন ক্যাথলিক রা। সানডে স্কুলে বাচ্চাদের শিক্ষা দেয়া হয় যে মেটাল শয়তানের কারসাজি। আয়রন মেইডেনের "নাম্বার অফ দ্যা বিস্ট" সম্ভবত অন্যতম বিতর্কিত গান। এই গানের অসংখ্য কপি পোড়ানো হয় বিভিন্ন যায়গায়। তবে মেটালে আসল শয়তানের উপাসনা যে পরবর্তীতে হয়নি তা ঠিক নয়। নরওয়ের কুখ্যাত ব্ল্যাকমেটাল ব্যান্ড গুলির কথা এখানে উল্লেখযোগ্য। কিন্তু মুলধারার মেটালে এরকম আবালীয় ধারনা তেমন দেখা যায় না।

মেটালের আরেকটি বৈশিষ্ট্য যা প্রায় সকল মেটাল ব্যান্ড গ্রহন করেছে সেটি হচ্ছে পরাবাস্তবতা। অসংখ্য মেটাল গানে অন্ধকার আলোর মিশেলে তৈরী হয়েছে নানা অবাস্তব দৃশ্যকল্প। এর উৎপত্তিও এই নষ্ট পৃথিবী থেকে সরে যাওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবেই আমি দেখতে চাই। কাফকার লেখা বা সমসাময়িক ফরাসী কিছু লেখকের লেখায় আমরা সাহিত্যে পরাবস্তবতার সফল প্রয়োগ দেখি। মেটালও তার নিজস্ব উপায়ে পরাবাস্তবতা কে ব্যাবহার করেছে। নানা পরাবাস্তব দৃশ্যকল্পে রুপকের মাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে অনেক গভীর সত্য। মেটালের এই বৈশিষ্ট্যটি সবচেয়ে সহজে চোখে পরে। আয়রন মেইডেনের অসংখ্য গানে আমরা এর সফল প্রয়োগ দেখতে পাই।

মেটালের অন্যতম প্রিয় বিষয় মৃত্যু। মেটালের মৃত্যু নিয়ে প্রায় বাড়াবাড়ি রকম উৎসাহ পশ্চাৎপটে জীবনের ব্যার্থতাকেই প্রকাশ করে। তাই মেটাল ঘেটেছে মৃত্যুকে অন্য যেকোন শিল্পমাধ্যম থেকে বেশী। মৃত্যুকে রোমান্টিসিজমেও পরিণত করেছে কোন কোন শিল্পী। মৃত্যু হয়ে উঠেছে আকাঙ্ক্ষেয়। পার্থিবতার প্রতি অপরিসীম ঘৃণাই মৃত্যু, এবং আত্নহত্যার বিষয়গুলোকে প্রকট করে তুলেছে মেটাল গানে।

ব্যার্থ জীর্ন পৃথিবীতে যখন নতুন প্রজন্মের বিশ্বাস ভঙ্গের শব্দ প্রতিধ্বনিত হচ্ছিল, তখন প্রতিবাদ, অস্বীকার, ভেঙ্গে ফেলার ইচ্ছা সর্বপরি এই পৃথিবী থেকে দুরে যাওয়ার আকুল ইচ্ছাই প্রাথমিক মেটাল যুগের প্রধান উপজীব্য ছিল। পার্থিব জীবনকে সোজাসুজি বাতিল করে দিয়ে মেটাল খুজেছিল এক নতুন জগৎ। কিন্তু ধীরে ধীরে পৃথিবীতে সাময়িক হলেও শান্তি এসেছে। মানুষের মনের অস্থিরতাও কমে এসেছে। যদিও বিশ্বের প্রতিকূলতা এখনও নতুন প্রজন্মকে করে বিভ্রান্ত, কিন্তু তা প্রকট ছিল না মেটালের জন্মলগ্নের মত। মেটালের মাঝেও আসে বিবর্তন। মেটাল আরো এক্সট্রিম হয় মিউজিকের দিকদিয়ে, কিন্তু বিষয় নির্বাচন, সুরে মৌলিক পরিবর্তন আসে। যুদ্ধের ভয়াবহতা, রাজনীতি, শান্তির আকুতি ইত্যাদি বিষয় হয়ে উঠে অনেক মেটাল ব্যান্ডের। উল্লেখ করব মেগাডেথের "পীস সেলস হু ইজ বায়িং" কিংবা "সিম্ফোনী অফ ডেসট্রাকশন"। অথবা "স্করপিয়ন্সের" "উইন্ড অফ চেন্জ"। মেটালের এই বাস্তবতার দিকে ফিরে আসা সকল মেটাল ব্যান্ড গ্রহন করেনি। আসলে হাজার জানরায় বিভক্ত মেটালকে নির্দিষ্ট কিছু ভ্যরিয়েবল দ্বারা মাপাও কঠিন।

মেটালের বিষয়, ভাবে, ইন্সট্রুমেন্টস এ ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে গত চার দশকে। আমরা এখন ইভালুয়েট কিংবা ইকুইলিব্রিয়ামের গানে দেখি স্ক্যান্ডেনেভিয়ান লোকসঙ্গীতের সুর। সেপালচুরাও ব্রাজিলের হেরিটেজ একাধিক বার ইউজ করেছে। আমরা দেখতে অধিকতর ধীর লয়ের ব্যাক মেটালের উথান। দেখতে পাই পাওয়ার মেটালের পতন(যা একসময় সর্বাধিক জনপ্রিয় জানরা ছিল)। কিন্তু সৃষ্টির শুরু থেকে মেটাল যেই প্রতিবাদের সুর, পৃথিবীতে মানিয়ে নিতে না পারার ক্ষোভ, আর সামাজিক "আউটসাইডার" দের শিখিয়েছে স্বাধীনতার শিক্ষা, তা আসলেই অতুলনীয়। মেটালের অসংখ্য নিন্দার পরও মেটাল সবসময়ই স্বাধীনতা আর সামাজিক পশ্চাৎপদ বৃদ্ধতন্ত্রের বিরোধীতা করে এসেছে।
পাপারোচের চিৎকার(যদিও পাপারোচ ঠিক মেটাল জানরায় পরে না তবুও লিরিকটি খুব এপ্রোপিয়েট মনে হল) ভালোভাবে বিষয়টিকে প্রকাশ করে

ফাক ইয়োর মানি
ফাক ইয়োর পজেশন
ফাক ইয়োর অবসেশন
আই ডোন্ট নিড দ্যাট শীট(বিটুইন এন্জেলস এন্ড ইনসেক্টস)

ঈশ্বরচিন্তা

১.

আমরা ভাবতে গেলে প্রায়শই চিন্তাভাবনা এগোতে পারে না, এটা হয়ত পরিপক্কতার অভাব ,যেমন প্রাচীন মানুষরা আকাশের তারকা কে অলৌকিক শ্বাপদের চোখ ভাবত। এখানে যত মানুষ জেনেছে ততই ভ্রান্ত এবং অলৌকিকের ধারনা থেকে মুক্ত হয়েছে। এই মুক্ত হওয়াটা কোন সার্ব্জনিন বিষয় নয় অবশ্যি, এখনো হস্ত রেখায় বিশ্বাসী মানুষ তাবিজ কবজে বিশ্বাসী মানুষ রয়েছে অনেক। তবে এ মানব সভ্যতার আওতায় জ্ঞান বলতে সেই জ্ঞানটি কিছু মানুষের হাতে থাকলেই তাকে আমাদের আওতাধীন বলতে পারি। ১৯২০ এ বলা হত মাত্র তিনজন মানুষ জেনারেল রিলেটিভিটি বুঝে। সেভাবে সঙ্গায়িত করলে আমরা এগিয়েছি অনেক্টুকুই,আমি প্রাচ্য পাশ্চাত্যের বিবাদে যাব না। মানুষ বলতে আমি আন্তর্জাতিক মানুষই বুঝাচ্ছি। এখন আমাদের জীবনে যদি র্যাশনালিটিকে স্ট্যান্ডার্ড ধরি তাহলে বলা যাবে ইন্টেলেকচুয়াল দৃষ্টি থেকে অলৌকিকতা মোটামুটি এক্সটিঙ্কট একটা অধ্যায়। মেইনস্ট্রীম মানুষ রা ,যারা সভ্যতার অর্জন জ্ঞান সমুহ কিছুটামাত্র আয়ত্ব করতে পেরেছে সে নিজের প্রত্যক্ষ সংস্পর্শে থাকা পরিবেশে অলৌকিকতাকে পাত্তা দিবে না। সুতরাং অলৌকিকতার শেষ আশ্রঅয় এখন পূরাণে, সাহিত্যে আর ঐতিহাসিক সমাজবিজ্ঞানে। আর সর্বপরি রিলিজিয়াস স্ক্রিপচার গুলোতে।

তাহলে বিশ্বাসের ভিত্তি কোথায় প্রোথিত? কোথাথেকে আমাদের মাঝে আত্নপ্রেরনা আসে সরলরেখার আবশ্যিকভাবে একটি শুরুবিন্দুর কল্পনা ?(যদিও আধুনিক গনিত বিজ্ঞান আমাদের ইন্টুশন থেকে অনেক এগিয়ে ,কিন্তু অধিবিদ্যিক চিন্তাধারা এই ইন্টুশঙ্কে ঘিরেই তৈরী। অইক্লিডিয় জ্যামিতি আমাদের জানায় রেখার শুরুবিন্দুর কোন প্রোয়োজন নেই, সেইসাথে সরলরেখাও আসন্নীকরন ছাড়া আর কিছুই নয় তখনো মেটাফিজিক্সের ধারনা প্রনেতারা সেই ইন্টুশনের বাইরে যেতে পারেন না। আমরা এখনো একই এন্টিটির যুগপত ভিন্ন অবস্থানে থাকা স্বীকার করে উঠতে পারি নি, যদিও কোয়ান্টাম পরিমন্ডলে তা প্রতিষ্ঠিত সত্য। )যেকারনে সকল মেটাফিজিক্যাল চিন্তাই ইন্টুশন থেকে আসা, একধরনের স্থুল সাধারনীকরন যা প্রধানত বিশ্ব সম্পর্কে অবৈজ্ঞানিক চেতনাই প্রকাশ করে। এদের এক মাত্র ডিফেন্স মেকানিজম হচ্ছে বিজ্ঞানের অসুম্পূর্নতা। বিজ্ঞান সম্পুর্ন নয়,এবং নিয়ত পরিবর্তনশীল। সেকারনে নতুন দৃষ্টিভঙ্গী নিয়ে আসে নতুন তত্ব। কিন্তু এই অসুম্পুর্নতা মেটাফিজিক্সের কোন বৈধতা হতে পারে না। এটা অনেকটা এরকম দৃষ্টিভঙ্গী যে “টার্বুলেন্ট ফ্লুইডের ” কোন স্ট্যাবল তত্ব নেই সুতরাং টার্বুলেন্ট ফ্লুইড নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে কোন চিন্তাতীত প্রকৃয়া দ্বারা। এই দৃষ্টিভঙ্গী মানব সমাজের ইতিহাসে খুবি জনপ্রিয় দৃষ্টিভঙী সন্দেহ নেই,একসময় বজ্রপাত ,রোগবালাই ও এই ব্যাখ্যার আওতায় ছিল। কিন্তু দেখাই যাচ্ছে মেটাফিজিক্সের কারিশমা সঙ্কুচিত হতে হতে বর্তমানে না না বহুরুপে সার্ভাইব করার চেষ্টায় মড়িয়া। প্রথমত মেটাফিজিক্স ঢুকে পড়েছে ঐতিহাসিক ঘটনাবলীতে, কারন বর্তমান যুগের অলৌকিকতা গ্রহনযোগ্য নয়। সেই সাথে বিজ্ঞানের অসম্পূর্ন অংশ গুলোতে। মেটাফিজিক্সের কিছু রুপভেদও আছে যারা মেটাফিজিক্সকে সামাজিক এবং নৈতিক মুখোশে গ্রহনযোগ্যতার যুক্তি প্রদর্শন করে। কেঊ কেউ মেটাফিজিক্স কে সামাজিকভাবে অসাড় ভাবায় একে ব্যক্তিগত পর্যায়ের বিবেকজাত উদ্দীপনা হিসেবে সঙ্গায়িত করার চেষ্টা করছে। প্রতিক্রিয়াশীলতা মেটাফিজিক্সের অনেক বড় বৈশিষ্ঠ্য কিন্তু এমন না যে মেটাফিজিক্স ধারঙ্কারী এন্টিটি বা পোষক প্রতিক্রীয়াশীল। এই সহনশীলতা কিন্তু মেটাফিজিক্সের অবদান নয়। কারন ঐতিহাসিকভাবেই আমরা দেখেছি কিভাবে মানব সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সহনশীলতার স্কেল এক্সপনেনশিয়ালি ইঙ্ক্রিজিং গ্রাফের মত আচরন করে।

এই পৃথিবীর কেন্দ্রবিন্দুতে ব্যক্তি স্বত্বা আমি। আমার চারপাশ কে ঘিরেই আমার অনুভুতি এবং বোধের বিবর্তন। আমি জানতে চাই বা বুঝতে চাই দেখেই চারপাশের গড়ে ওঠে নানা ডিসিপ্লিনের নানা জ্ঞান। এই বোধের উত্তর দিতেই আমরা যেটা (সকল ক্ষেত্রেই ব্যাক্তি আমির ই সম্প্রসারন)। কারন সকল কিছুই এসেছে কোন না কোন ব্যাক্তি জিজ্ঞাসা থেকেই। আমি সুখ পাই এই অইঊক্লিডিয় বিসৃতির বক্র স্তানকে বৌদ্ধিক আরোহ পদ্ধতি দ্বারা বুঝতে। সুখ পাই ইয়েটস এলিয়ট সুধীন দত্তের কবিতায় জীবন বোধের ধারনাতীত কারুকার্যে। এ সুখ সত্য স্বীকারের সুখ। বস্তুগত মানুষকে জোর করে অবস্তুগত করারে চেষ্টা কোন বৌদ্ধিক আরোহ পদ্ধতিতে পরে না।
মানুষ কে মানুষ ভাবাই মানুষ কে সর্বোচ্চ সম্মানিত করা অতিলৌকিক উচ্ছিষ্ট ভাবার চেয়ে। তাই নৈর্বত্তিক হতে চাই ,তীব্র ভাবেই নৈর্বত্তিক হতে চাই।


২.

একটা ছোট গল্প দিয়ে শুরু করছি। মেরুদন্ডী প্রানীর প্রাচীনতম পূর্বপুরুষ হচ্ছে সেলা। বেচারাদের অবশ্য পৃথিবী নিয়ন্ত্রন করা বর্তমান কর্ডেট দের তুলনায় কিছুই ছিল। স্পাইনাল কর্ডের সামান্য উর্ধ্বাংশই ছিল তাদের সম্বল। ছোট, কয়েক সেন্টিমিটারের প্রানীগুলো ছিল প্রচন্ড বিপদে। তখন রাজত্ব চলছে বিশাল বিশাল আর্থোপোড প্রিডেটরের। সাত আট ফুট লম্বা এই সব কিলিং মেশিন সমুদ্র দাবড়িয়ে বেড়াত। সেলা লুকাত বালির নীচে।

এখন কি ভাবা সম্ভব? প্রাথমিক ভাবেই ভাবা যায় এই সেলা ব্যাটাদের কোন অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল যাতে তারা হতে পেরেছে সবচেয়ে শক্তিধর মেরুদন্ডী দের পূর্বপুরুষ। আর আর্থোপোডেরা হতে পেরেছে তেলাপোকা। কিন্তু বাস্তবে তাদের কোন বিশেষ ছিল না সেই আর্থোপোডদের ডেজার্ট হওয়া ছাড়া। স্পাইনাল কর্ডের অর্জন একটি ব্যার্থ প্রাকৃতিক নির্বাচনের উদাহরন হয়ে যাবারও যথেষ্ঠ সম্ভাবনা ছিল।

কিন্তু হঠাতই শুরু হয়ে গেল বরফ যুগ। কততম বরফ যুগ আমার সঠিক মনে নেই। কিন্তু বরফ যুগের শুরুতে বিপুল সামুদ্রিক প্রানী ডাঙ্গায় চলে আসল। ডাঙ্গায় দেখা গেল অন্য সমস্যা। যে প্রথিকুল গ্যাস এবং ম্যাগমা ভস্মের হাত থেকে বাচার জন্যে আর্থোপোডদের অর্জিত বহি:কংকাল অসম্ভব রকম এফিসিয়েন্সির প্রমান দিয়ে আসছিল, তুলনামুলকভাবে শান্ত পৃথিবীর বায়ুমন্ডলে তারা যখন এক্সপোজ হয়ে গেল তখন সেটা একটা বাড়তি বোঝায় পরিনত হল। স্পাইনাল কর্ড অর্জনাকরী সেলার বংশধরেরা বাড়তে লাগল আকৃতিতে তাদের অন্ত:কংকাল কাঠামোর সুবিধায়। আর আর্থোপোডেরা তাদের বহি:কংকাল কাঠামোর জন্যে সীমাবদ্ধ বৃদ্ধির জন্যে কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে শুড়ওয়ালা তেলাপোকায় পরিনত হবার প্রস্তুতি নিল।

হয়ত আর কিছুদিন পর বরফযুগ শুরু হলে বুদ্ধিমান হিসেবে ইভোলভ করত আর্থোপোডেরাই, আর ভাড়ার ঘরে মেয়ে আর্থোপোডেরা মানুষ দেখে চিতকার চেচামেচি করত।

গল্পের মরাল হচ্ছে আকস্মিকতা। কোইনসিডেন্স।

মহাবিশ্ব অত্যন্ত জটিল একটি তন্ত্র। এখানে কোন সাড়বস্তু আউটপুট হিসেবে পেতে হলে কিছু আকস্মিকতার সাহায্য দরকার। আবার সেই আকস্মিকতা কোন দৈববলে হয় না। যেকোন সিস্টেমের প্রোবাবিলিস্টিক ন্যচারের জন্যেই হয়।

মহাবিশ্বের প্রধান সুত্রগুলি তাই অত্যন্ত সার্বজনীন, যেখান থেকে পার্টিকুলার সলিউশান পেতে গেলে আক্ষরিক সমাধানের ভান ত্যাগ কররতে হয়। আমরা এখনও অসংখ্য আসন্নীকরনের সাহায্য নিয়ে জেনারেল রিলেটিভিটির ফিল্ড ইকুয়েশান গুলি সমাধানের চেষ্টা করি।

তাই কোন তত্ব স্ট্যাটিক নয়, যেকোন তত্ব নির্ভর করে তার ইনিশিয়াল পর্যবেক্ষন, প্রাথমিক হাইপোথিসিসের উপর। তাই হাজার বার সঠিক প্রমানিত হওয়া তত্ব হাজার একবারে অসাঢ় প্রমানিত হতে পারে। তাতে কিছু যায় আসে না। কারন বুদ্ধিবৃত্তিক প্রানী হিসেবে যৌক্তিক সিদ্ধান্তই নেয়ার চেষ্টা করে যাব। সেই সিদ্ধান্ত ভুল হতে পারে। কিন্তু তাও অপ্রমানিত সুপার স্ট্রিং থিওরীতে আমার আস্থা থাকবে পৃথিবীকে কোন কচ্ছপের পিঠে ভাসমান থালা বলে কল্পনা করার চেয়ে। কারন অতিতন্তু তত্ব দাড়িয়ে আছে কিছু সাহসী হাইপোথিসিসের উপর, সেই হাইপোথিসি থেকে এসেছে সৌন্দর্য মন্ডিত এক গানিতিক মডেল। কোয়ান্টাম ফিল্ড থিওরীর কুৎসিত ইনফিনিটি প্লেগে আক্রান্ত তত্ব গুলোর চেয়ে এটি গাণিতিক ভাবে সুসংহত। যদি এটি ব্যার্থ হয় তবেও এটি মানুষকে দিয়ে যাবে মহাবিশ্বকে দেখার নতুন কিছু দৃষ্টিকোন। এজন্যেই কোন বৈজ্ঞানিক তত্বই ব্যার্থ নয়, কারন তার পথ ধরেই নতুন তুলনামুলকভাবে সম্পূর্নতর নতুন তত্ব।

অন্যদিকে কছ্ছপতত্ব মানুষকে নতুন কোন আলো দেখাবে না। বরং অজানা সম্পর্কে যৌক্তিক ধাপগুলোতে মানুষকে অনুৎসাহিত করে পেছনে ঠেলে দেবে।

মানব সভ্যতার ইতিহাস একবিশাল আরোহ পদ্ধতি যা ধাপে ধাপে এগিয়ে যাবে যুক্তি এবং মানবতা দিয়ে। এই এগিয়ে যাওয়ায় কোন শেষ কথা নেই। যারা দাবী করে শেষ কথা আছে তারা সত্য জানতে আগ্রহী নয়, অথবা সাহসী নয়।

মানুব সভ্যতার ইতিহাসে মানুষ যতটা অধিবিদ্যিক ধারনার পেছনে সময় নষ্ট করেছে তাও কিন্তু অস্বাভাবিক নয়। এর পেছনে রয়েছে নিজের অস্তিত্ব সম্পর্কে ইনসিকিউরিটি। প্রতিমুহুর্তে মৃত্যুকে ভয় পাওয়া। মহাবিশ্বের মাঝে নিজের গুরুত্বহীনতাকে অস্বীকার করা। কিছু একটা থেকে যাবে সেই আশা প্রথম মানুষের মাঝে ঢুকিয়েছিল পৌরাণিক পুরহিতরা। অনেকটাই পলিটিক্যাল কারনে। কিন্তু এই আশায় ঘুরপাক খাচ্ছে প্রতিনিয়ত, আর দলবদ্ধতার সিকিউরিটির প্রতি তাদের তীব্র আকাঙ্খাই তাদের অবচেতন ইনসিকিউরিটিকে প্রমান করে। প্রতিমুহুর্তেই নিজেদের দলকে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে বসানোর চেষ্টা, কিংবা কি হারে বিশ্বে তাদের নিজেদের সংখ্যাবৃদ্ধি তা প্রমানের জন্য অসংখ্য পরিসংখ্যান উপস্থাপন সবকিছুই প্রমানকরে দাবী কৃত ঐশ্বরিক আধ্যাত্নিকতার অসাঢ়তাকে। এই তীব্র নিরাপত্তাহীনতাই জন্ম দেয় হিংসার, ক্রোধের। আমি দিকে দিকে তার চিহ্ন খুজে পাই।

ঐতিহাসিক ভাবে যার অস্তিত্বেই প্রশ্নবিদ্ধ সেই মোজেস এর প্রতিশ্রুত ভুমির কথা বলে পশ্চিম উপত্যকায় ,গাজায় চলে সেটেলমেন্ট, অকুপেশনের যাতাকলে নতুন হলোকাস্ট, কিংবা মার্কিন মুলুকে শ্বেত আধিপত্য বাদীদের মদদ দেয় যাযকরা, ইভানজেল(উচ্চারন নিশ্চিত নই) খ্রীষ্ঠান এক যাযক ঘোষনা দেয় বারাক ওবামার রক্ত পবিত্র ভুমিকে আরো পবিত্র করবে , কিংবা আমার দেশের বাংলাভাই, সৌদির বিন লাদেন!!


প্রান্তিক মানুষেরা ধর্মপালনে উৎসাহী হয় না। দারিদ্র্য টিকে থাকা এসবের সাথে লড়াই করতে করতে তাদের উপর স্বর্গ নরক একাকার হয়ে যায়। অনকে দুর থেকে দেখলে যেমন খুব ভিন্ন দুটি রং কেও আলাদা করা যায়। আর উচ্চবিত্তের মাঝেও রিচুয়াল পালনের হার কম, ধর্ম চিরকাল পালিত হয় মধ্যবিত্ত সমাজ দ্বারাই।

আমি লোভের সাগরে ডোবা মানুষ দেখতে পাই, অতিলৌকিক পুরস্কারের আলোয় জ্বলজ্বলে চোখ দেখতে পাই। অসংখ্য স্তুতি দেখতে পাই । কোন এক স্বৈরাচারের প্রতি। তার পরাক্রমশালী ক্রোধ, বালকসুলভ আবেগ, গভীরতাহীন চিন্তাশক্তি, আর অদ্ভুত "ন্যায়বিচার" দেখে তাকে আমার কমবয়সে সিংহাসনে ওঠা কোন মিশরীয় ফারাও মনে হয়। উচ্চারিত স্তুতি আর অর্থহীন রিচুয়ালের প্রতি তার তীব্র আগ্রহ দেখে তাকে আমার সম্ভ্রান্ত পরিবারের বখে যাওয়া একমাত্র সন্তান মনে হয়। প্রতিমুহুর্তে তার নিজস্ব সৃষ্টির কাছ থেকে নিজের নাম শুনতে চাওয়ার মত হাস্যকর হীন্মন্যতার কারনে আমার মনে হয় তার শৈশব খুব ডিস্টার্বেন্সের মধ্য দিয়ে গেছে। তার মাঝে আমি অসংখ্য অস্তিত্বের সংকটে ভোগা মানুষের ছাপ দেখতে পাই। যুগে যুগে মানুষহের সকল কষ্ট স্তুপ হয়ে জমে যেন তার অবয়ব তৈরী হয়েছে। মানুষের সামাজিক পরিমন্ডলে সকল সমস্যার যে স্থুল সমাধান মানুষের মাঝে আসে সেই সমাধান গুলো এক্সিকিউট করতেই যে স্বত্বা দরকার তাকে তেমনই দেখতে পাই। ডুবে যাওয়া মানুষের শেষ চেষ্টার প্রধানতম উধাহরন হিসেবে যুগে যুগে ধর্মবেত্তারা তাকে তৈরী করেছে।

ঈশ্বর কি এই মহাবিশ্বের অনুকুলে যতগুলো আকস্মিকতা দরকার ছিল তার সংকলন হতে পারে? তাহলে মহাবিশ্বের সাথে ইশ্বরের ইন্টারএকশান খুবই সীমাবদ্ধ এবং নৈর্ব্যত্তিক।

অসংখ্য পবিত্র বই দেখতে পাই । অনেক মনোযোগ দিয়ে পড়েও সেগুলো থেকে কোন মহিমান্বিত শব্দগুচ্ছ পেলাম না। ওল্ড টেস্টামেন্ট পড়ে মনে হল কোন প্রাচীন যুগের ত্যারেন্তিনোর মুভির স্ক্রিপ্ট। এত বর্বর মানুষের বর্ননা পবিত্র ভাবা হতে পারে আমার ধারনা ছিলনা। সুসমাচারে দেখলাম অসংখ্য স্ববিরোধী এবং পরিবর্তিত ঈশপের গল্পের সমাহার। দেখলাম কুরানে অদ্ভুত সব আদেশ। দেখলাম যাদুতে আক্রান্ত হচ্ছেন নবীজি আর তার প্রতিকার নাযিল হচ্ছে।

আমি ক্লাস ত্রি এর বিজ্ঞান বইতে হাজার বছরের পুরাতন এইসব বই এর থেকে উন্নত সত্যের কথা দেখেছি।

আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগি না। আমি মানুষ। প্রতিটি ইকুয়েশন আমাকে আনন্দ দেয়, ইলেক্ট্রোডাইনামিক্সের যে সমীকরনটা সেদিন কম্পিউটারের সাহায্য ছাড়া সমাধান করে ফেললাম সেটা আমায় আনন্দ দেয়, সার্ভার স্ক্রিপ্টিং এ যে সোজা থ্রেড যোগ করতে পেরে একটা ভুল বানানের হ্যালো ওয়ার্ল্ড রিডিরেক্ট করতে পারলাম তা আমাকে আনন্দ দেয়, সেদিন ফাইনম্যানের ক্যারেক্টারইসটিকস অফ ফিজিক্যাল ল বই টা খুজে পেয়ে শিশুর মত নেচেছিলাম, ভালোবাসার মানুষটির হাতে হাত রাখতে এখনও প্রথম দিনের মত আমার মন খুশিতে ভরে যায়, আমি আনন্দিত হই। আমার অনুভুতি , সুখ দু:খ সবকিছুই বাস্তব এবং জান্তব। আমার খুশি হতে কিংবা এ পৃথিবীতে আমার খুশি ছড়িয়ে দিতে ,কিংবা সমস্য জর্জরিত পৃথিবীতে অন্তত একটি সমস্যার আংশিক সমাধানের ইচ্ছা, সবই তীব্র বাস্তব। কোন অলৌকিক ইশারায় নয়।যদি ভালোবাসা, হেসে উঠা , নতুন বইয়ের পাতার যৌবনের গন্ধ নেয়ার জন্যে আমার মৃত্যুর পর আমার মিশে যাওয়া কোষ থেকে কোন অতিলৌকিক স্বত্বা ক্লোন তৈরী করে আমাকে আজন্ম অক্সিডেশনের জন্যে নরকে নিক্ষেপ করতে চান তাহলেও আমি দু:খ করব না, বরং তার অবিচারের জন্য প্রতিবাদ করব। আমাকে চিন্তা শক্তি দেয়ার পর সেটার স্বাধীন ব্যাভারে যদি আমি অপরাধী হই, তাহলেও মাথা নত করব না।

আমি গর্বিত আমি মানুষ। আমি আনন্দিত আমি পেয়েছি জ্ঞানের স্বাদ, ভালোবাসার সৌরভ, ঘাসের উপর পড়ে থাকা শিশিরে আলোর পূর্ন আভ্যন্তরীন প্রতিফলন। আমি কোন আঙ্গুর রস বয়ে যাওয়া হুর পরী বেষ্টিত অজানা যায়গার আমাকে লোভ দেখায় না। আমি এই মাটিতেই সুখপাই , কবিতা পড়ে সুখ পাই, কথা বলে সুখ পাই।


৩.

নিয়ন্ত্রন, শব্দটি বেশ গুরুত্বপূর্ন । কারন সবাই নিয়ন্ত্রন করে অথবা নিয়ন্ত্রিত হয়। নিয়ন্ত্রন হতে পারে জাগতিক অথবা ঐশ্বরিক অলৌকিকতা পূর্ন। আমরা যেকোন স্বাভাবিক সিস্টেমের মতই নিয়ন্ত্রন চাই। নিজের দায়িত্ব কারো ঘাড়ে দিতে পারলে আশ্বস্ত হই। স্থুলবুদ্ধিরা পীর ফকির ধরে থাকে, পরলৌকিক দায়ত্ব নেবার জন্যে। এজন্যেই যুগে যুগে মানুষ এবসোলিউট অসম্ভব কথা শুনিয়েছে আমরা মেনে নিয়েছি। এখনও যুক্তরাষ্ট্রে আছে মোর্মেন ধর্মালম্বীরা, সায়ান্টোলজির অনুসারীরা। এই মহাবিশ্ব জটিল এবং বিভ্রান্তকারী। যখন ছোট অবস্থায় ভাবতাম এই আকাশের কোন শেষ নেই তখন শরীর কেপে উঠত। ভেবে পেতাম না কিভাবে অসীম কে চিন্তা করা যায়। তাই আমরা দুর্বল। আমাদের বৌদ্ধিক এবং দার্শনিক দায়িত্ব অনেক ভারী মনে হয় আমাদের কাছে। তাই দায়িত্ব ছেড়ে দিতে আমরা সদাসর্বদা প্রস্তুত।

নিয়ন্ত্রন মানব সমাজের প্রধান বিল্ডিং ব্লক। মানব সমাজ তৈরী হয় ব্যাক্তি মানুষ কে অস্বীকার করার মধ্য দিয়েই। সামাজিক সম্পর্ক সেখানে ব্যাক্তি মানুষের চেয়ে বেশী গুরুত্বের অধিকারী। একারনেই তৈরী হয় গাবদা সাইজের আইনের বই। যদিও এটা সাধারন ধারনা যে সমাজ ছাড়া টিকে থাকা অসম্ভব, কিন্তু সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে ধারনাটি সমাজের প্রতি অতিপক্ষপাতে আক্রান্ত। যেখানে আমজনতা নানা নিয়ন্ত্রনের চক্করে পরে অন্ধকার দেখার পরেও ভেবে নেয় ননসেন্স নিয়মকানুন তার ভালোর জন্যেই তৈরী করা, সেখানে আমরা দেখতে পাই ব্যাক্তি মানুষের করুন মৃত্যু। এই শতাব্দীতে সমাজের প্রথম কাজ মানুষ কে সার্ভ করা নয়, তার নিজের পেট ভরা। এবং তার সুফল ছোট্ট একটি দলকে প্রদান করা। কিছু মানুষ বুঝে যেতে পেরেছে মানুষের সমাজ কে যারপরনাই বিশ্বাস করে, তাই সমাজের নাম ধরেই নিয়ন্ত্রনের জাল বসানো সম্ভব। এই কতিপয় মানুষরাই যুগে যুগে দেখা দিয়েছে কখোনো রাজনৈতিক নেতা, কখোনো ধর্মবেত্তা রুপে।

মানব সমাজে ঈশ্বরের নামে নিয়ন্ত্রন অনেক পুরোনো ইতিহাস। সেই পুরাতন যুগের গ্রাম্য পুরোহিত থেকে যার শুরু। সকল আধুনিক ধর্মই যখন মুলধারায় মাথা তুলে দাড়িয়েছে তখন তীব্রভাবে রাজনৈতিক হয়ে গিয়েছে। আমরা দেখতে পাই কিভাবে গীর্জাগুলো রাজনৈতিক ক্ষমতা নির্লজ্জভাবে দখল করে নিত, কিংবা আধুনা হিজবুত তাহরীর কিংবা জামাত যা চায়। ইসলাম শুরু থেকেই পলিটিক্যাল ছিল। কারন মুলধারায় এটি অনেক দ্রুত আসতে পেরেছে। অন্যদিকে ক্রিশচিয়ান ধর্ম দীর্ঘদিন আন্ডারগ্রাউন্ডে থেকেছে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক ক্ষমতা দখলের আগে। এটা খুব ইন্টারেস্টিং একটা বিষয় কিভাবে ঈশ্বর মানব রাজনীতির এত বড় একটি ফ্যাক্টর হয়ে উঠেন। তিনি একের পর এক ওহী পাঠাতে থেকেন রাষ্ট্র পরিচালানার উপর। যদি ওহী না পাঠান তাহলে তার প্রতিনিধিত্বকারী যাযকেরা জিওর্দানো ব্রুনো পুড়িয়ে মেরে রাজনৈতিক ক্ষমতার ষোলকলা পূর্ন করে। মধ্যযুগের ইনকিউজিশনের কথা মনে হয় মানব ইতিহাসে নিয়ন্ত্রন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে সবচেয়ে কুৎসিত প্রচেষ্টার একটি। হিটলার বাবাজী যেটি জাতীয়তাবাদের ধুয়ো ধরে ৪০০ বছর পর আবার করে দেখিয়েছে।

ধর্মের মানবিক হতে গিয়ে কিভাবে রাজনৈতিক হয়ে জিজিয়া কর উৎপাদনে উৎসাহী হয়ে পরে এটির বিশ্লেষনে গেলে সমাজের নিয়ন্তা হবার যে সুপ্ত বাসনা মানব মনে লুকিয়ে থাকে, অথবা অসংখ্য ব্যাক্তিস্বত্তাকে হত্যা করে যে আমোদ লাভ করা যায়, সেদিকেই দৃষ্টি যায়। সকল ধর্মই শুরু হয় আধ্যাত্নিক মুখোশে। কিন্তু একজন চতুর রাজনীতিবিদের মত ধর্মের কাঠামোও নিয়ন্ত্রন লোভী হয়ে উঠে। প্রকারান্তে ঈশ্বর হয়ে উঠেন "পাওয়ার হাঙ্গরী"। সর্বশক্তিমানের এরকম শক্তির লোভ কেন যেন বেমানান দেখায়।

কোন ধর্মের মাঝে সত্যিকার সাম্যের কথা থাকে না, বিভেদ বিভাজন, বর্নবাদ প্রত্যেক ধর্মের সুন্দর অনুশাসনের নীচে লুকিয়ে থাকে। কারন যে সমাজে মানুষের ব্যাক্তিতার মূল্য আছে সে সমাজকে নিয়ন্ত্রন করাও কঠিন। এজন্যেই ধর্ম দেয় বিভাজনের রুপরেখা, নিয়ন্ত্রনের প্রধান হাতিয়ার যে বিভাজন। ধর্ম মানুষে ধার্মিক এবং বিধর্মী এই দুইভাগে বিভক্ত করে দেয়। ঈশ্বর বিশ্বাসের পুরস্কার স্বরুপ ধার্মিকদের হাতে পরে রাষ্ট্র পরিচালনার ভার। তারা নিয়ন্ত্রন করবে বিধর্মীদের। কারন তারা বিশ্বাস করে ভিন্ন কোন ঈশ্বরকে।

মানুষ ব্যাক্তিস্বত্তা কে সামাজিক চাপে অস্বীকার করে অনেক সময়। কিন্তু সকল নিয়ন্ত্রনের প্রধান শত্রু এই ব্যাক্তি মানুষটি। যারা সম্মান করে নিজস্ব চিন্তাকে তারা নিয়ন্ত্রকের চোখে অপরাধী। টুকরা টুকরা করা হয়েছিল মনসুর হাল্লাজকে। কোপানো হয়েছিল হুমায়ুন আজাদকে। সকল পত্রিকায় কমিউনিস্ট পার্টির জয়জয়কার ছাপানো হত লেলিনের রাশিয়ায়। বিরোধী দলের পার্থীদের নির্বাচনে প্রচারনা করতে দেয়া হত না বিপ্লব পরবর্তী রাশিয়ায়। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় ইন্সিটিউশন সম্ভবত ডানপন্থী লোকদের তৈরী। ধর্মের সাথে জাতীয়তাবাদ মিশিয়ে নতুন নতুন বিভাজনের খসড়া আর নিয়ন্ত্রনের নীলনকশা প্রতিনিয়তই তৈরী হচ্ছে।

নিয়ন্ত্রিত হতে চাই না আমি। সুন্দর তম হোক আর কুৎসিততম হোক, ছোট্ট পৃথিবীতে দু-চারটে কথা ভাবতে চাই, বলতে চাই। কারো উপকার না করতে পারি, কারো ক্ষতি না করে থাকতে চাই। নিজের ব্যাক্তিগত স্বত্তাকে একটু সম্মান করতে চাই। মাথা একটু কম নোয়াতে চাই।

বিজ্ঞান ঈশ্বর সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত নেয় নি, তাই ঈশ্বর আছেন কি নেই সেটা সম্পর্কে আমার কোন সিদ্ধান্ত নেই। তবে আমি ব্যাক্তিস্বত্তা কে সম্মানের জন্যে অনন্ত নরকই যদি সেই স্বৈরাচারী স্কাইড্যাডি আমার জন্যে বরাদ্দ করেন তাহলে আমি বলব ব্রিং ইট অন।

৪.

মানুষের প্রাচীনতম ধর্মীয় অনুভুতি গুলো প্রথমত উৎপন্ন হয়েছিল একধরনের ভীতি থেকে। প্রথম যে মানব সমাজে অলৌকিকতার ধারনা এসেছিল তা সম্ভবত প্রকৃতিকে বুঝতে অক্ষমতার কারনেই। প্রাচীন সমাজে ধর্মমত গুলো প্রধানত ছিল যাদু নির্ভর। বিভিন্ন প্রাকৃতিক শক্তিকে না বুঝতে পেরে সেগুলোকেই উপাসনা শুরু করে প্রস্তর যুগের মানুষ। এ উপাসনা কিন্তু সম্পূর্ন পার্থিব কারনেই হত। প্রাথমিক উপাসনা সম্ভবত ছিল ঝড় বন্যা বজ্রপাত হতে বাচার জন্যে। সেজন্যেই আমরা দেখতে পাই প্রতিটি প্রাকৃতিক শক্তিকে উপাসনা করার ব্যাপারটি। সমাজ যখন আরো জটিল এবং কাঠামোবদ্ধ হয়ে এল তখন মানুষের মৌলিক চাহিদার বাইরেও অন্যান্য চাহিদা তৈরী হল। যার ফলে উপাসনার অনুষঙ্গও বাড়লো। শিকারে যাবার আগে শিকারের দেবতার উপাসনা বা মাছ ধরেতে যাবার আগে পানির দেবতার প্রতি উপাসনা সেগুলোই নির্দেশ করে।

প্রকৃতির কাছে উপাসনার সময়ই মানুষ আবিষ্কার করে প্রাচীনতম ধর্মীয় বোধ। পুরস্কার এবং তিরস্কার বা শাস্তি। কয়েকটি ধর্ম ছাড়া বাকি সব ধর্মই দাড়িয়ে আছে পুরস্কার এবং তিরস্কারের এই কাঠামোর উপর। তবে প্রাচীন সমাজে এই পুরস্কার বা তিরস্কারের ব্যাপারগুলো ছিল হাতে হাতে ফল পাবার মত। অর্থাৎ যখন পুরস্কার বা তিরস্কার হিসেবে চলতি জীবনের কোন অনুষঙ্গই উঠে আসত। হয়ত বাচ্চা হওয়ার জন্যে অথবা বেশী ফলনের জন্যে। খরায় ফসল জ্বলে গেলে সেটাকে ইন্টারপ্রেট করা হত দেবতাদের রোষ হিসেবে।

প্রাথমিক ধর্মগুলো তাই প্রকৃতিবাদী ছিল। এবং পুরস্কার বা তিরস্কারও সীমাবদ্ধ ছিল পৃথিবীর জীবনের মাঝেই। এই ব্যাপারগুলো পরিচালনার জন্যে শ্রমবিভাগ ঠিক কখন তৈরী হয়েছিল জানা যায় না। তবে পুরুহিততন্ত্র যে অন্যতম প্রাচীন প্রতিষ্ঠান এটা নিশ্চিত হওয়া যায়। পুরোহিতরা তাদের নিয়ন্ত্রন বজায় রাখার জন্যেই ধর্মবোধে নতুন রহস্যের আমদানি করে। তাদের হাতে ধর্মবোধের নিয়ন্ত্রন চলে যাওয়ায় একই সাথে তারা হয়ে উঠে রাজনৈতিক ক্ষমতার উৎস। আমরা দেখতে পাই কৃষিভিত্তিক সমাজে গ্রামগুলোতে গ্রাম্যপ্রধান দের সাথেই গুরুত্বের সাথে অবস্থান করতে পুরুহিত দের। প্রাচীন সমাজ গুলোতে গ্রাম্য প্রধান সাধারনত ন্যাচারাল লিডার বা অধিকতর সক্ষম মানুষেরাই হত। কিন্তু ক্ষমতার ভাগাভাগিতে যখন পুরুহিতরা ফ্যাক্টর হয়ে উঠল তখনই বোধহয় মানুষের মাঝে প্রথম "আনডিফাইন্ড" কোয়ালিটির মানুষরা ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে যাওয়া শুরু করেছিল। যে ঐতিহ্য আমরা এখনও বহন করে চলেছি।

সমাজের জটিলতা বৃদ্ধির সাথে সাথে মানুষের চাহিদা এবং সে অনুসারে না পাওয়ার ক্ষোভ বৃদ্ধি পায়। মানুষ পুজার ফলে প্রতিশ্রুত পুরস্কার না পাওয়ার ক্ষোভ যখন পুরুহিতদের সিংহাসন টালমাটাল করে দিল তখনই সম্ভবত জন্ম নেয় মানব ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ন ধারনা। পুরুহিতরা বুঝতে পেরেছিল নিয়ন্ত্রনের উদ্দেশ্যে মানুষকে তৃপ্ত রাখাও জরুরী। যখন পার্থিব চাহিদা পুরনে দেবতারা ক্রমাগত ব্যর্থ হচ্ছিল তখন বাধ্য হয়েই পুরুহিত দের খুজতে হয় জনসাধারনকে তৃপ্ত করার নতুন উপায়। মৃত্যুর পরের জীবনের ধারনা জন্মায়। পুরস্কারের সংজ্ঞা তাই পার্থিব থেকে সরে গিয়ে পরলৌকিক হয়ে উঠে। তবে প্রাথমিক পর্যায়ে স্বর্গ নরকের আলাদা সংজ্ঞা তৈরী হয় নি বলেই মনে হয়। মৃত্যুর পরের জীবনটাকে পার্থিব জীবনের আদলেই ডিজাইন করে পুরুহিতরা। সেখানে পুরস্কার আর শাস্তির তালিকা তাই তৈরী হয় পার্থিব ইন্দ্রীয় সুখ এবং কষ্ট কে ঘিরেই। সেখানে আমরা দেখতে পাই ক্ষুধা, পান, নারী সঙ্গের বর্ননা। আর শাস্তি হিসেবেও আগুন কেই বেছে নেয়া হয় যা চিরকাল মানুষের ভয়ের কারন।

এই প্রকৃতিবাদী ধর্মবোধ থেকে একেশ্বরবাদীতায় উত্তরন হয়েছে কোন দার্শনিক উৎকর্ষের জন্যে নয়। বরং আমরা দেখতে পাই গ্রীক মেধাবীরা বহু ঈশ্বরেই বিশ্বাস করতে। অন্যদিকে একেশ্বর বাদী হিব্রু সভ্যতার(যদিও মোজেস বা ডেভিড ,সলোমনের সময় হিব্রু ধর্ম পুরোপুরি একেশ্বর বাদী ছিল না। জিহোভা ছাড়াও আরো কিছু মাইনর দেবতার পুজা হত) কিন্তু সংস্কৃতি এবং বিজ্ঞানের অবদান শূন্যের কোঠায়। একেশ্বর বাদ প্রধানত বিবর্তিত হয়েছে রাজনৈতিক কারনেই। পুরোহিতরা সবসময়ই সম্রাটদের তোষামোদী করত, আবার সম্রাটরাও পুরোহিত দের রয়েসয়ে চলত। সম্রাটের শক্তির প্রমান হিসেবেই পুরোহিতরা ঘোষনা করত কোন দেবতার সুপিরিয়রিটি। একযুগের দেবতা তাই অন্যযুগে অপাংক্তেয় হয়ে পড়ত। এভাবেই ক্রমাগত রাজনৈতিক শক্তির চালিকা হিসেবে পুরুহিত তন্ত্রই একদেবতার ধারনা নিয়ে আসে।

মানুষের মৌলিক নীতিবোধের সাথে স্বর্গ নরক কতটা কম্পাটিবল তা নিয়ে তর্ক হতে পারে। তবে নরকের ধারনা আমি কোনভাবেই নৈতিক বলতে পারি না। অনন্ত শাস্তির ধারনা অসুস্থ ধারনা। বারট্রান্ড রাসেল জেসাসের নৈতিক চরিত্র নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন কারন তিনি নরকে বিশ্বাস করতেন। আর নৈতিক বিষয়গুলোর বিকাশ এভাবে ভয় বা লোভ থেকে আসুক সেটাকে গ্রহনযোগ্য ভাবা যায় না। লোভ জিনিসটাই একটা কালো অনুভুতি। তাই সুস্থ নৈতিকতা লোভের মাধ্যমে মোটিভেটেড হওয়া উচিত নয়। আর ভয়ও একটি নৈতিকভাবে দুর্বল মোটিভেশন। পুরস্কার বা শাস্তি নয়, মানুষের মনে প্রয়োজন মানবতার মোটিভেশন। আমার সামনে বিপদগ্রস্ত মানুষ থাকলে তাকে আমি সাহায্য করব, এটার মোটিভেশন চিরায়ত মানবতাই হওয়া উচিত।

মানুষের ইতিহাসে অসংখ্য বর্বর অধ্যায় আমরা পার করে এসেছি। রোমান কলিসিয়াম থেকে শুরু করে ক্রুসেড, উইচ হান্ট, ভিন্ন মতালম্বীদের পুড়িয়ে মারা, জোসেফ স্ট্যালিন, এডলফ হিটলার, হেনরী ট্রুম্যান, বেন্জামিন নেতানিয়াহু,জুলফিকার আলী ভুট্টো, গোলাম আজম, জর্জ ডব্লিউ বুশ, সাদ্দাম, বলে শেষ করা যাবে না এত অমানবিকতার ইতিহাস। মানব সমাজের ইতিহাসে আমরা ক্রমাগত উদাহরন তৈরী করেছি নৃশংসতার, রক্তের আর মানবতার বিরোধী যুদ্ধের। কিন্তু তারপরও টিকে আছি আমরা। নতুন শিশুরা আসছে, তারা হাসছে কাদছে। এখনও পৃথিবীতে অবশিষ্ট আছে আনন্দাশ্রু। মানুষ টিকে থাকবে। তবে কোন প্রযুক্তি, মহান জ্ঞান, অসংখ্য ঈশ্বর, স্বর্গ নরকের হাইপোথিসিসের জন্যে নয়, মানুষ টিকে থাকবে মানুষের মনে থাকা নি:শর্ত মানবতার জন্যে। প্রতি যুগেই অন্তত কিছু মানুষ এই নি:শর্ত মানবতাকে রক্ষা করেছে, আগলে রেখেছে। এই যুগেও রাখবে। আর পৃথিবীতে টিকে থাকবে আনন্দাশ্রু।

দ্যা গ্রেইট এস্কেইপ

একা মানুষ কি ভাবে?একা মানুষ মানেটাই বা কি? মানুষ বলতে কি শুধু ৪৮০ টাকার বায়োকেমিক্যাল স্তুপ?


সম্ভবত মানুষ শুধু একটি বিচ্ছিন্ন এন্টিটি নয়, মানুষ বলতেই তার সামাজিক সম্পর্কসমুহের বিশাল তালিকা। তাহলে একা মানুষ কি? কবিতা কি একা মানুষের? জিম মরিসনের লাইট মাই ফায়ার কি সামাজিক মানুষের সৃষ্টি নাকি একা মানুষের?

শংকর থেকে মোহাম্মদপুর রাস্তায় ডিভাইডার নেই। নতুন বসানো হচ্ছে। জ্যামের প্রচন্ড উতসাহে স্তিতিশীল বিভিন্ন যানবাহন, রিকশায় অসংখ্য কপোত কপোতি ,বাড়ানো ঠোট আর সিউডো সেক্সুয়াল আচরনের পাশে দর্শক হয়ে চায়ের দোকানে চাতে বন ভিজিয়ে খাচ্ছিলাম। সামাজিক সম্পর্করা কখোনো কিভাবে নিজেকে ভয়ের গহ্বরে ফেলে দেয় তা ভেবে আতকে উঠছিলাম। আমি বাজি ধরে বলতে পারি প্রতিটি মানুষ একবার অন্তত ২৪ ঘন্টার বৃত্তীয় পরিক্রমনের মাঝে ভাবতে বাধ্য হয় "i just want to disappear" । ধরনী দ্বিধা হও আমি তন্মধ্যে প্রবেশ করি।

বাবা মা যেভাবে ২৪/৭ ক্লান্তিহীন পাহাড়া দেয়, অথবা প্রেমিকা যেভাবে হাতে সিগারেটের গন্ধ পেলে কেন সে এখনও আমাকে ছেড়ে যায় নি সেটা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে, বন্ধুবান্ধবরা যেভাবে স্ত্রৈণ ট্যাগ লাগিয়ে বাতিল করে দেয়, প্রতিটিবারেই মনে হয় পৃথিবীর মাটি বড় আরাধ্য। এটাকি মানসিক সুস্থতার লক্ষন যে উধাও হতে চেয়েও পার্থিব দাবার ঘুটি হিসেবে থেকে যাই, কোন হাতি ঘোড়া নয়, ছাপোষা এক ছকের ক্ষমতার সৈনিক।

মাঝে মাঝে চায়ের দোকানের চায়ে ভেজা বনরুটি আর জ্বলন্ত গোল্ডলীফকেই সুখের দেবতা মনে হয়, চায়ের দোকানের নোংরা পরিবেশকেই দেবী আফ্রোদিতির যৌবন ছোয়ায় সবুজ মনে হয়। পালাতে ইচ্ছা করে খুব।

চাতে ভিজে বনরুটি নরম হয়ে পৃথিবীতে অবশিষ্ঠাংশ সুখের আস্বাদ দিয়ে যায়, আর সকল সুখের মতই আলোর গতিতে নি:শেষ হয়ে যায়। গোল্ডলীফের ফিল্টার শুধু অবশিষ্ট থাকে আর আমার ভেতরে পালানোর ছন্দ শাশ্বত হয়ে ফিরে ফিরে আসে।


আমি সদর দরজা পেড়িয়ে নোংরা গলিতে হোচট খেলাম
নিঃশ্বাস চেপে আকুলিবিকুলি খাবি খাওয়া ফুসফুসে পাম্প করে
সজোরে প্রবেশ করলাম সীসা মেশানো বিষবাষ্প আজলা ভরে,
শহরের ব্রাত্য সৌরভ পাশ কাটিয়ে গলির আবাসিক খুপড়ি
সারির আকরিক অশুদ্ধির জানালাগুলির
ওপাশ হতে ভেসে আসা নাগরিক দ্ব্যার্থতার হুংকার কানে মেখে
আবিস্কৃত হলাম রাজপথে
পেড়িয়ে গেলাম পার্ক রেস্তোরার অজস্র কপোত কপোতী মুখোশের
ফাঁপা প্রেমাতুরতার হাস্যকর যাত্রাপালার ট্রাম্পেট মিঊজিককে
রাস্তায় রাস্তায় বাড়ানো শূন্যপাকস্থলীর হাতের বিপরীতে মনুষ্য
সফিস্টিকেশনের বমনার্ত অহংকারের পাশ দিয়ে দৌড়ের সময়
সারা অভ্যন্তর হতে অপমানবীয় আশীর্বাদ শুনলাম প্রত্যাদেশের মত

হাঁপড়ের মত হাপাতে ভাগ্যাহত হতে পাশ কাটালাম সত্যভাষনের
সৌর রোদের সামনে জমা ঘন কৃষ্ণাভ বর্ষণমেঘের আহত মিছিল
সদ্যজাতের পাশে দানব পৃথিবীকে রেখে দৌড়াতে থাকলাম
ফুটপাথের বাস্তবতার মাঝখান দিয়ে
প্রতিবেশে অনেক বিষ ,বিষক্ষয়ের আশায় প্রতিবেশের গাঢ়
বুনোটে দ্রবীভূত হবার আশায় দৌড়ালাম
জীবন্মৃতের ডিকম্পোজড মাংসের মত খসে যাক কবিতারা
শুকিয়ে যাক দারফুরের অনাহারের মত

দৌড়াচ্ছি পথে মিশে যাচ্ছি জৈবনিক কোলাহলে
অসীম উতকেন্দ্রিকতার উপবৃত্তীয় পরিসীমায়;
তোমার বুকে জন্মানো কবিতার কাছ থেকে ।

যেসকল সময়ে মনে হয় আত্নহনন ভীষন অযৌক্তিক

এখন সময় খুব প্যাচানো জালের মত মুক্তিচেতনাহীন।তাই বিভিন্ন আটকানো নি:শ্বাসে বাতাস ভারী,অসুস্থ।মনে হয় থ্রেশহোল্ড পেরিয়ে গেছি,ভেঙ্গে যাবো যে কোনোও সময়ে কেবল অপেক্ষায় আছ কখন ভাঙ্গবো।

আত্নহননে উত্সাহী মানুষরা সবসময়েই আত্নহননের সিদ্ধান্ত নেবার পর খুব আয়েশী হয়ে যায়।আত্নহননের কোনও চিন্তা মাথায় না আসলেও অস্তিত্বের প্রশ্ন (কেন দাড়িয়ে আছি বা কেনই দাড়িয়ে থাকব!)সব গুলো ধমনীর কপাটিকাতে আছড়ে পরে নিরন্তর জলোচ্ছাসের শক্তিতে,ক্রোধে।তাই মুখ লুকোতে হয় বালিশে অথবা প্রিয়ার কাম্য বুকে যদি কিছুটাও আলো আস্বাদনের সুযোগ ঘটে।

এইসব আকাশপাতাল বিভ্রান্তিকর চিন্তা করে আমি ভাঙ্গা,ফাটা,বিবর্ন ফুটপাথ দিয়ে হাটছিলাম।হাটার কোনোও কারন নেই কারন গন্তব্য হীন আমি।একটা রিকশা নেব কি না ভাবছিলাম।দুর্দান্ত ঠান্ডা পড়েছে।আমার শীতের বোধ খুবই কম হওয়া সত্বেও(জবরজং vegitable দের যা হয়!)অস্থিমজ্জার ছন্দিত স্পন্দন শুনতে পাচ্ছিলাম।সময়টা সন্ধ্যা।ফুটপাথে ভাপাপিঠার ভাপে একরকম আনন্দের গন্ধ।চিতই পিঠার সাথে আগ্নেয় ভর্তা।সামনেই একজোড়া(মানুষতো অবশ্যই,অথবা দেখায় মানবিক আকৃতির মতই,যে হারে অমানুষ উত্পাদন জরায়ু কারখানায় বাড়ছে,তাতে সাবধানতাই মূলমন্ত্র)ছেলেমানুষ আর মেয়েমানুষ চিতই পিঠার গোফদাড়িওয়ালা মামার নিকটে ক্রমাগত শীতের আইকন পিঠা সাটাচ্ছে।ঝালে ছেলেমানুষটার তেমন কিছু হয়েছে বলে মনে হয় না,কিন্তু মোটামুটি আকর্ষনীয় যৌবনজনিত খাজভাজ সম্মৃদ্ধ মেয়েমানুষটার অবস্থা তথৈবচ।চোখ থেকে কয়েকফোটা শোকতাপ হীন অশ্রু মুছে দিচ্ছে মুখের মেকআপস্তুপ।আমি ভাবলাম নীলাভ কষ্টক্ষরণের কি নিদারুন অপচয়।কাদতে ভুলে গেছি কতকাল হল!মেয়েমানুষটার নীচের ঠোট যথেষ্ট আবেদনময়ী,কিন্তু সেটা তো ঐ পাহাড়ী গোত্রভুক্ত ছাগলের বংশধর ছেলেটা ,ফরাসী দাড়িওয়ালা,ঝালে কাবু না হওয়া ছেলেটার সম্পত্তি।(ছেলেটার সম্পত্তি!কি ভীষন পুরুষতান্ত্রিক বোধ!আমি নিজের মাঝে,মস্তিস্কের অন্ধ গলিতে লুকিয়ে থাকা পশ্চাতপদ রাক্ষসটাকে একটা জঘন্য গালি দিলাম)
ছেলেটার বিবর্তনজনিত পরিচয় নিয়ে সন্দেহ প্রকাশের কারন মেয়েমানুষটাকে পছন্দ হয়েছে,তাই ছেলেটাকে কতটুকু নিজের অহংবোধের দশটনী ট্রাকের নীচে ফেলে চিড়ে চ্যাপ্টা,থ্যাতলানো করা যায় সেটাই এখানে প্রাধান্য পাবে।আমিই যোগ্য পুরুষ!!

পাশে দাড়িয়ে পিঠা খাবার ছলে মেয়েমানুষটাকে আরেকটু দেখব কি না ভাবছিলাম।ঠিক তখনই ঐ মিসম্যাচজুটি(আমার মতানুসারে) পিঠাখাওয়ার রণে ভঙ্গ দিলো।একটা রিকশা ডাকলো।ছেলেটা ডানপাশে বসলো,মেয়েটা বাম পাশে।ছেলেটা মেয়েটার হাত নিজের হাতে গুজে রাখলো,চোখে চোখ রাখলো আর রিকশার হুড তুলে দিয়ে কিছু তথাকথিত প্রাইভেসীর ব্যবস্থা করলো।

আর আমি কেনো আত্নহত্যা অযৈক্তিক তার পক্ষে কিছু শক্তিশালী যুক্তি মাথার মাঝে অন্ধ ভিখারীর মত হাতড়াতে লাগলাম।

আমার (প্রায়)নির্বান লাভ

ডানপাশে ঊড়ুক্কু পলিথিনের ব্যাগ হাওয়ার নিঃশ্বাসে ফুলছে ফাপছে, বাতাসে কর্কশ ধূলো ,নিশ্বাসে রিসেশনের দুর্যোগকালীন দামী জ্বালানীর পোড়া সৌরভ, শাহবাগের মুড়িভর্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিলাম বিশাল এক টসটসে টোপ হয়ে। চারপাশের নাগরিক মাকড়শার জালে আটকানো ,কুকড়ানো নষ্ট আকৃতির জীবনটা ফেরি ঝুলিয়ে ধেয়ে আসছে টোপ গেলার জন্যে। পাকস্থলীর জারক এনজাইমে সাতড়ানো অবস্থায়ই সাধারনত আমার দুঃস্বপ্ন গুলো শেষ হয়। সেদিন শেষ হল নারী দেহের বক্র অনুপ্রবেশে। হতাশ ভাবে ভাবলাম “মেয়েমানুষ!! কি জিনিস যে বানাইল মওলা!!!যত তর্জন হুংকার, সব শেষ হয়ে ধুলায় মিলাবে মেয়েশরীরের স্বর্নসম সুগন্ধী ভাজে……”
মুড়িভর্তা আর জীবনের পেসিমিস্টিক ডাইসেকশন ছেড়ে মনোযোগ দিলাম যৌবনাবতীর দিকে, চাকভাঙ্গা মধুর মত যৌবন ঊপচে উপচে পরছে রহস্যময় সব বর্নীল রোদ মেখে সোনা আলোর ঝিলমিল ভাজ। জীবনের অর্থ কোন কান্ট ,হেগেলের ঢাঊস বইতে, অথবা মেট্রিক টেন্সরের ইকুয়েশনে পাওয়া যাবে না। এই নারী আর মেঘের স্তর খুলে বাষ্প আদ্রতা মেখে যে আদর এই শরীরে বিছিয়ে দেবার জন্যে পৌরাণিক কাল হতে আছড়ে আছড়ে কাটা গলার কোরবানীর গরুর মত তড়পাচ্ছে মানুষ আর তড়পাচ্ছি আমি………জীবনের বৌদ্ধিক অর্থের নিগুঢ় ইন্টারপ্রেটেশন হচ্ছে সেটাই। অন্য কোন নপুংসক নৃতত্ব মানি না, মানি না জৈব নীরস হরমোনাল ব্যাখ্যা……এস্ট্রজেনের পচা কুতসিতপনা চাই না………ভেজা শিশিরের গন্ধ দিয়ে তৈরী নারী………যেমন জানি আশ্লেষে চুম্বনএর জন্যেই, আইসবার্গের উপর ঠিকরানো আলোর ঊজ্জ্বল তীব্র স্বাদে নারীর ঠোট পান করার জন্যেই বিধাতা একজোড়া ঠোট দিয়েছেন আমায়……নারীর স্বাদের জন্যেই জিভ দিয়েছেন………বাজে অকেজো রাজনৈতিক বক্তব্যের জন্যে ন্য। হাত পেয়েছি নারী শরীরে অভিযানের জন্যে ,দুর্গম সব ক্ষেত্রসমুহ আবিস্কারের জন্যে,………………………

স্বপ্নাহত আমি নারীশরীরের দিকে এগোলাম…………কালো পীচের ঊপর যদি অনুভুতির স্পর্শ থাকত………হাজার কোটি ঘাস ফুল বেড়িয়ে আসত নির্মম কংক্রিটের বুক চিরে……………

নারী এবং তাকে জয়ের ঊদ্যেশ্যে একজন পুরুষ………প্রাচীনতম এক দৃশ্য।

(কবিতাসমূহ একঝটকায় নোংরা অসুখের বিবরন লেখা লিফলেটে পরিনত হল নারী(!)র পেছনে ফিরে তাকানোয়………কবিগুরুর দীর্ঘশ্মশ্রুর ফ্যাশন এখনো কিভাবে জনপ্রিয় সেটা নিয়ে দার্শনিক চিন্তায় মেতে হাটার ভেক্টরটির ১৮০ ডিগ্রী কৌনিক ঘুর্নন সম্পন্ন করলাম

অত্যাচারী সূর্যের নীচে মুখোশের মিছিল

কাক ডাকা ভোরে বেড়িয়ে নিজেকে নানা ভাবে প্রবোধ দিলাম এই পৃথিবী অসমতল ভাবলেই অসমতল। নাহলে ইউক্লিডীয়ান সমতল ভেবে নিলে কেউ তো জবাবদিহী করতে আসছে না। গস ,বোলাই ,রীম্যান ,আইনস্টাইনরা একটু কষ্ট পেতে পারে, কিন্তু তাদের থোড়াই কেয়ার করি আমি। জানি এই ভোরের হিম লাগা বাতসের আনুপূর্বিক লোমকুপ অভিযান, আর থেকে থেকে শিউড়ে ওঠার পর্যায়ক্রমিকতা যদি আমি থার্মোডিনামিক্স দিয়ে ভাবতে চাই তাহলে তা বুদ্ধি প্রতিবন্ধিতার অসামান্য উদাহরনের মাইলফলক হয়ে থাকবে। ঝেটিয়ে বিদায় করছে রাত্রিকে, সূর্য ব্যাটার ঘৃনার ছাপ ভোরের ভাজে ভাজে। গাছের নীচ, দেয়ালের কোন, আর ঘিঞ্জি সৌর বিরোধী জায়গাতে বেচারা রাত তার অন্তিম নিঃশ্বাস নিচ্ছে। স্বাস্থ্যসচেতন ভোটকা কট্টর পুজিবাদী মানুষরা আয়েশী ভঙ্গিতে নিজের শরীরের ফ্যাটি এসিডের গ্লিসারল এস্টার কমানোর চেষ্টায় এখানে ওখানে তেলাপোকার মত ছটফট করছে। হাস্যকর লাগে মানুষের এস্টার জারিত করনের এত আতিশয্য দেখে। আমি সাম্যবাদের তেমন ভরসা রাখি না। রাসেলের মত আমারো বলশেভিকদের স্বেচ্ছাচারী আচরন অনেকটা নিষ্ঠুর ধর্মবেত্তার মত লাগে। আমি জানি ছড়িয়ে পড়তে না দিলে, ঝুকি নিয়ে স্বাধীন প্রবাহের সুযোগ না দিলে জলপ্রবাহ এদো ডোবা হতে বাধ্য। আকাশ কিংবা সাগর সীমানাহীন হতে পারে, আগ্রাসী স্বাধীন বলেই। তারপরও এস্টার জারনে মানুষের অধ্যাবস্যায়ের পাশে হ্যাংগারে ঝোলানো কাপড়ের মত কংকালে ঝোলানো চামড়ার কাগজ কুড়ানো টোকাই তি কিছুক্ষনের মত আমাকে সাম্যবাদী সমাজতান্ত্রিক করে ফেলল। ইচ্ছা হল পুজিপতিদের কাছে তাদের অতিরিক্ত এস্টার ছিড়ে নিয়ে আসি এই টোকাইদের জন্যে। জানি কিছুই করা হবে না আমার। এস্টারের জায়গায় এস্টার থাকবে। টোকাইরা হবে মাঝে মাঝে ভোগবাদী মার্কিন মধ্যবিত্তের অবসরে নিজেকে মানবতাবাদী প্রমানের লক্ষ্যে ফেলা একফোটা ফসফরাসের নির্যাস এর উপলক্ষ্য, নিউইয়র্ক টাইমসের প্রচ্ছদ। দোর্দন্ড প্রতাপে জাতিসংঘের অঙ্গ সংগঠন গুলো প্রকাশ করবে দুঃখ, আর সমাধান দিবে মুক্তবাজারের নামে আরেকটি মেরুদন্ড কর্তনের রিচুয়াল।

পায়ে হেটে অতিক্রম করে যাই একের পর এক সূর্যের কামড়ে আক্রান্ত প্রতিবেশ কে। রাতের আলো যখন ঘনিয়ে আসে, আধারের চাদর যখন টান টান স্থিতিস্থাপক হয়ে উঠে ,তখন মনের গভীর থেকে সকল মানুষের মাঝে উঠে আসে আত্ন পরিচয়। সমাজের সিসিটিভির আশংকা যখন অর্থহীন হয়ে পরে তখন জেগে উঠে মানুষ। মুখোশ খুলে ফেলে। কেউ ফিরে যায় আত্নপর্যালোচনায়, কেউ অনুভব করে লুকানো ভালোবাসার সুগন্ধ, কেউ সেদিন বাসে কন্ডাকটরের অন্যমনস্কতার সুযোগ নিয়ে মেরে দেয়া দুই টাকা নিয়ে কষ্ট পায়, কেউ শান্তি খোজে নতুন শস্যের মাঠে স্পর্শ করতে করতে এগিয়ে যাওয়ার মত লুকিয়ে যায় নারী শরীরের মেঘের ভাজে ভাজে, কেউ বা স্নায়ু উদ্দীপ্ত রেখে চিতকার করে বেচে থাকার নিদারুন অর্থহীনতাকে গালি দিতে দিতে। কেউ মানে না সমাজ, সভ্যতা, ডিফারেন্সিয়াল ইকুয়েশন, রাষ্ট্রযন্ত্র, আর সমাজবিজ্ঞানের মোটা মোটা কাগজের স্তুপ। মানুষ হয়ে উঠে আইসোলেটেড ব্যক্তিগত সততার প্রকাশ। রাত্রি অন্ধকারের সাথে নিয়ে আসে আরেকটিবার তীব্র ভাবে প্রত্যেকের একমাত্র “আমি” হওয়ার।

এই কাকডাকা ভোরে স্বৈরাচারী সূর্য আবার বিস্ফোরনের মত ছড়িয়ে যায় প্রতিটি মানুষের নিঃশ্বাসে। প্রতিটি স্বত্তা আবার কম্পিত হাতে মুখোশ পরে নেয়। সুর্যের নীচে মাথা নোয়ায়। সমর্পন করে চিরায়ত আমিত্ব কে।

বাসের ভয়াবহ জনসংখ্যা বিস্ফোরনের মাঝে চিড়ে চ্যাপ্টা হয়ে ভাবতে থাকি এত শব্দ আর তথাকথিত জীবনের স্পন্দন কতটুকু যৌক্তিক। আলো জীবন দেয় না মুখোশ? আলো মৃত্যু ঘটায় ব্যক্তি মানুষের। প্রতিদিন জন্মায় মুখোশ আটা সামাজিক কাঠামো। এই ভীড়ে হাস্ফাস করতে থাকে বিশাল সমাজের একটি পারিসাংখ্যিক স্যাম্পল। শক্ত এবং নিশ্চিত কোন মুখাবয়ব চোখে পরে না। সবাই কনফিঊজড। কিভাবে সাম্লাবে সব সামাজিক সম্পর্কের ঢাউস বিশ্বকোষ। থেকে থেকে মোবাইল বাজে, ঝড়ের গতিতে কথা, না না অযুহাত। বিজয় সরণী তেই ঐ পাশের অথোরিটি ফিগার কে বলা বাংলা মোটর।

ভীড়ে খুব জড়োসর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটি মেয়ে। একেবারেই বৈশিষ্ট্যহীন একটি নারী। এতগুলো প্রভু পুরুষ কে একসাথে দেখে দৃষ্টি অবনত। শিখেছে সারাজীবন কতটুকু মূল্যহীন একজন নারী। কিভাবে বাবা থেকে স্বামীতে মালিকানা বদলের ডাইনামিক্সে যাবে সেই চিন্তা পাম্প করে ঢোকানো হয়েছে মস্তিস্কে। ভীড়ের মাঝে যেন হঠাত ই তৈরী হয় সাময়িক রাত্রির উদাহরন। তাই মুখোশ খুলে ফেলে একজন ব্যক্তিমানুষ ,আবশ্যকিভাবেই পুরুষ, হাত বোলায় মেয়েটির অপরিপক্ক স্তনে। মেয়েটির মুখে মুহুর্তে খেলে যায় নীরব চিতকার। কিন্তু এই সাময়িক রাত্রি কেবল প্রভু পুরুষের জন্যেই। তাই সামাজিক মুখোশ এটে ঘন কষ্টের সাগরে সাতড়ায় মনুষ্যবিবেক।

আকাশের কার্যবিধি

আকাশের কাজ কি তা নিয়ে কবিকূল পাখিকূল দুইটা রোয়া ওঠা কুকুর
ঢালিউড ব্যানারে ঢাকা নতুন রিকশা আর হোটেল লাবনীর রিসিপশনিস্ট
মেয়েটার মাঝে নিদারুন মতদ্বৈততা থাকতে পারে ।
তবে পৌরাণিক প্রাচীন যুগে সরীসৃপ দাপানো নব্য পৃথিবীর অনুর্বর অমসৃন
ত্বক ঢাকতো অপরিচিত আকাশে ধুলা আর সালফার কণাতে ।
টাইরেনোসোরাসরা ধূসর ময়লা ভীতিকর আকাশ দেখতো দিনভর
তাদের হৃদপিন্ডতলে ডারউইনীয় সারভাইভাল ছাড়া নীলাভ কঠিন
স্তরীভুত বেদনা কষ্টের কাঠ কয়লা আঁকা নিঁখুত প্রতিকৃতি বিষবষ্পে
উপাদেয় হতাশা সবই অনুপস্থিত ।

এখন সবার অস্তিত্ব ঢাকা নীলাভ নীল শুন্যতা আর মাঝে মাঝে
নীলাভ নীল শূন্যতা আর মাঝে মাঝে গদ্যময় পানিচক্রহেতু
শুভ্র অনন্ত হতে ফোটা ফুলের মত কবিতা জড়ানো মেঘ ।
মানব প্রজাতির ভাগ্যে কেন এই নীল চাদর বিভ্রম আর আশা
নিরাশার বৈপরিত্ব ছাপিয়ে সকল কিছুর উপমা আর উপমান্বিত
হওয়া?হাজারটা সৌর বছর ধরে হতাশাবাদী আত্নহননের প্রত্যাদেশপ্রাপ্ত
মানব মনরা একটু একটু করে আকাশকে রাঙ্গিয়েছে আকাশ এখন
রোদের মত উজ্জ্বল আর পৌরাণিক কাল হতে যাতনা আর পুনরাবৃত্ত
কষ্টভারে ন্ব্যুজ নীল ।

আকাশের কাজ তবে
ছাড়া মেঘের মুক্ত উড্ডয়ন নির্নয় নয়
প্রেমাতুর গর্দভদের প্রিয়ার শরীর সম্পর্কিত উপমাও নয়
আশ্রয় নয় পচা গলা মনুষ্য মনের শব গন্ধের
জোছনা সমূহের প্রেক্ষাপটও নয়
বিষুবরেখাগামী তুন্দ্রা অঞ্চলীয় পাখিকূলের বান্ধব নয়
অথবা কয়লা পোড়ানো গ্রীন হাঊজ গ্যাসে নষ্ট হওয়াও নয়
আকাশের কাজ তবে সৌন্দর্যের সংজ্ঞা আর সুন্দর বিশ্বাস উদগত
অলস আবেগ জমার ক্ষেত্রও নয়
আদিগন্ত সবুজ প্রান্তরে নষ্টালজিক ছাতার মত বিভ্রমও নয়

আকাশের একমাত্র রীতিবদ্ধ কাজ
আকাশ এক বিস্তৃত আস্তাকূড় মানবিক কষ্টস্তুপের ।

নির্বাসনে কবিতাফোঁটা

কবিতা তোমরা অনেক জ্ঞানী এবং রহস্যময়
দিনরাত অলস সময়ে অথবা ধুসর আলোয় ভীড়তে মানব মনে
এলিয়টের মনে তোমরাই পোড়োজমি হয়ে জন্মেছিলে
ইয়েটসের কলমে দ্বিতীয় আগমনের বেথেলহেমের পথে
অথবা ওবায়দুল্লাহর ধুসরধুলোমাখানো সরকারী লালফিতে আমলাতন্ত্রের অবসরে কিংবদন্তী হয়ে ।
তোমাদের প্রসবে বিবর্তন উত্তীর্ন মানব মন ভীষন আষ্ঠেপৃষ্ঠে মোচড়িয়ে কেঁদেছে
এখনো পেটমোটা স্টেরিওটাইপের সমালোচকরা পাত্তা দেয় না তোমাদের প্রসবানন্দকে ।

হয়ত এই শতকের বহুমাত্রিকতা
কেবল কষ্টজড়ানো উথান পতন আর হলোকাস্টের অপ্রয়োজনীয় রক্তারক্তি
সেই সাথে এক ছটাক গ্লোবাল ওয়ার্মিং ককটেলের সাথেই ডুবে থাকে ।
যেহেতু সাইক্লোন নার্গিস আর চীনের স্কুলের নীচে চাপা পরা ৯০০ টি
শিশুর দোমড়ানো অস্থিমজ্জা সৌরতন্ত্রের তৃতীয় গ্রহের নামফলকে দাড়িয়েছে
এটাই মধ্যাহ্নের সুর্যের হলদেটে রোদের মত সত্য

এখন কবিতাহীন নির্বাসনে আছে পরে গুটিকয় মানুষ আর পৃথিবী জুড়ে অসংখ্য বনমানুষ ।